জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে শিক্ষকদের সমাবেশ, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতে শিক্ষার্থীদের হত্যা, তাঁদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ককে তুলে নেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকসমাজের শিক্ষকেরা।
একই দিনে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা অবিলম্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। এর আগে আজ রোববার সকালে আরিফ সোহেলের পরিবার অভিযোগ করে, ডিবি ও সিআইডি পরিচয়ে আরিফকে গতকাল দিবাগত রাতে তুলে নেওয়া হয়েছে।
আজ বেলা একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো ফজিলাতুন্নেছা হল-সংলগ্ন এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে সমাবেশ করেন শিক্ষকেরা। সমাবেশে কোটা আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীদের হত্যা, হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদ জানানো হয়। পাশাপাশি আরিফ সোহেলের তুলে নেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
সমাবেশে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়। এখন যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের নিরাপত্তার কথা বলে তুলে নেওয়া হচ্ছে। আমরা জানি, শিক্ষার্থীদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ‘সারা দেশে যা ঘটে যাচ্ছে, তাতে আমরা ভীষণভাবে মর্মাহত। বর্তমান সরকার যেভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, আমরা যাঁদের স্বৈরাচার বলতাম, তাঁদের আমলেও এমন হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। যে বাহিনীকে আমরা মনে করতাম জনগণের নিরাপত্তা দেবে, সেই বাহিনীকেই সরকার নিজের স্বার্থে শিক্ষার্থী ও জনগণের ওপর লেলিয়ে দিয়েছে। তারা নিরীহ শিক্ষার্থীসহ সাধারণ লোকজনকে হত্যা করেছে।’
শিক্ষকদের সমাবেশের পর বিকেল চারটার দিকে আরিফ সোহেলের মুক্তির দাবিতে ক্যাম্পাসের পুরোনো পরিবহন চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটিতে বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনার চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে আরিফ সোহেলের ছোট বোন উম্মে খায়ের ঈদি বলেন, ‘গতকাল রাতে সাদাপোশাকে কিছু লোক জোর করে বাসায় ঢুকে আমার ভাইকে তুলে নিয়ে যায়। আমি ও আমার পরিবার এ ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ন্যায়ের একটি অধিকারের জন্য অন্যায়ভাবে আমার ভাইকে তুলে নিয়ে যায়। আমার ভাইকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানাই।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক আবদুর রশিদ (জিতু) বলেন, গতকাল রাত থেকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও আরিফ সোহেল কোথায় এবং কীভাবে আছেন, তাঁরা জানতে পারেননি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামীপন্থী লোকজন প্রতিনিয়তই তাঁদের হামলা-মামলার ভয় দেখাচ্ছেন। এমনকি সমন্বয়কদের গ্রামের বাড়িতে গিয়েও হয়রানি করছে পুলিশ। তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, দ্রুত সময়ের মধ্যে হল খুলে দেওয়া হোক। যেসব সমন্বয়ককে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাঁদের নিঃশর্তভাবে মুক্তির দাবি জানাচ্ছেন। হামলা-মামলার ভয় দেখিয়ে তাঁদের যৌক্তিক আন্দোলন দমানো যাবে না।