সুনামগঞ্জ-নড়াইল-ভৈরব-গাজীপুরে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ২২, স্থাপনায় ভাঙচুর ও আগুন

সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ। রোববার দুপুরে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায়ছবি: খলিল রহমান

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি ঘিরে সুনামগঞ্জ, নড়াইল, ভৈরব ও গাজীপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে। কোথাও কোথাও বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাঁদানে গ্যাসের শেল, গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। সংঘর্ষে সুনামগঞ্জে বেশ কয়েকজন, নড়াইলে একজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০, গাজীপুরে ১২ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩২ ও ভৈরবে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

সুনামগঞ্জে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ

দুপুরে সুনামগঞ্জে শহরের আলফাত স্কয়ারে শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়। পরে সেখানে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। একই সময়ে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জড়ো হন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। আলফাত স্কয়ার থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের দিকে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এ সময় বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়।

জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের কার্যালয়ের সামনে ছিলাম। ছাত্রলীগ ও পুলিশ এসে হামলা চালায়। পরে সংঘর্ষ বাঁধে। আমাদের কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়েছে। অনেকেই আহত হয়েছেন।’

ভৈরবে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

দুপুর থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছে। একই সঙ্গে ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ এলাকায়ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে। উভয় সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

সকাল ১০টা থেকে ভৈরব বাসস্ট্যান্ড ও উপজেলা পরিষদ চত্বর দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ ও ছাত্রলীগের প্রতিরোধে তারা ওই এলাকা দখলে নিতে পারেননি। এ সময় কালিকাপ্রসাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা। বেলা একটার দিকে বিক্ষোভকারীরা বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা করে। এর পর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছিল।

নড়াইলে থেমে থেমে সংঘর্ষ

নড়াইলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত শহরের শেখ রাসেল সেতু এলাকায় থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় একজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির নাম নাহিয়ান প্রিন্স (৩৪)। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া আহত অন্যরা হলেন সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আকাশ ঘোষ রাহুল, মাহমুদুল হাসান, রুপালি বেগম ও সৌরভ।

নড়াইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হলেও পরে কিছু লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে মারমুখী আচরণ শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে আমরা গ্যাস গান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দিই।’

নড়াইলে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। রোববার দুপুরে সদর উপজেলার মাদ্রাসা বাজার এলাকায়
ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরে আনসারদের গুলি

দুপুরে গাজীপুরের অধিকাংশ পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ সময় শ্রমিকেরা মিছিল নিয়ে সফিপুর আনসার একাডেমির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় আনসারদের গুলিতে অন্তত ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

সকাল থেকে বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন শুরু করলে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে মৌচাক ও তেলিচালা ও কোনাবাড়ী এলাকার প্রায় সব কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে শ্রমিকেরা বের হয়ে সফিপুর আনসার একাডেমির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে আনসার ভিডিপি একাডেমির সামনে থাকা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করার চেষ্টা করেন। তখন আনসার সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও ছররা গুলি ছুড়ে। এতে পথচারীসহ অন্তত ১২ জন আহত হন।

গাজীপুর শিল্পপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান হোসেন বলেন, আন্দোলনের কারণে গাজীপুরের অধিকাংশ কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে বলে তাঁদের কাছে খবর এসেছে।

এদিকে দুপুর ১২টার দিকে কালিয়াকৈর থানার সামনে অবস্থান নিয়ে ৪ থেকে ৫ শতাধিক লোক বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় থানায় হামলার চেষ্টা করলে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন। কালিয়াকৈর থানার ওসি এ এফ এম নাসিম বলেন, আন্দোলনকারীরা থানায় হামলার চেষ্টা করে। পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।