রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগে শিক্ষার্থীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে জালিয়াতি করে ভর্তি হওয়ার অভিযোগে ছয় শিক্ষার্থীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর মতিহার থানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে বাদী হয়ে এই মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম।
মামলার আসামিরা হলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইয়াছির আরাফাত (২০), ফিশারিজ বিভাগের মো. আলিফ হোসেন (২০), লোকপ্রশাসন বিভাগের আল শামস তামিম (১৯) ও ফোকলোর বিভাগের নজরুল ইসলাম। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিশির আহমেদ (২১), ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ফজলুল করিম ওরফে মাহিন (২৩) ও আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শফিউল্লাহ (২৬)। এর মধ্যে শিশির, ফজলুল ও শফিউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অবৈধভাবে অন্যের বদলি হয়ে অংশ নিয়েছিলেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় তিনটি ইউনিটে প্রায় দুই লক্ষ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষায় ইয়াছির আরাফাতের বদলে অবৈধভাবে শিশির আহমেদ, আলিফ হোসেনের বদলে ফজলুল, আল শামসের বদলে শফিউল্লাহ ও নজরুল ইসলামের বদলে পরীক্ষা দেন শিশির আহম্মেদ। শিশির, ফজলুল ও শফিউল্লাহ পরীক্ষার্থী না হওয়া সত্ত্বেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে ‘প্রক্সি পরীক্ষার্থী’ হিসেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এতে তাঁরা পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ আইন-১৯৮০-এর আওতায় অপরাধ করেছেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ক্যাম্পাস খোলার পর তদন্ত করে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে গত বছর ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে আটক হয়েছিলেন বায়েজিদ খান নামের এক শিক্ষার্থী। ওই দিন বায়েজিদ জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়ের নাম উল্লেখ করে বলেছিলেন, তাঁকে এ কাজে নিয়োগ দিয়েছিলেন তন্ময়। এ ঘটনায় ৪ আগস্ট রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মুশফিক তাহমিদ তন্ময়কে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে মুশফিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মামলার এজাহারেও তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক বলেন, ‘আমাদের কাছে যে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আরও অনেক জনের নাম এসেছে। তবে যথাযথ তথ্য-প্রমাণ না থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বায়েজিদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি গোয়েন্দাদেরকে ছাত্রলীগ নেতা তন্ময়ের নাম বলেন। পরে গোয়েন্দারা তাঁকে নিয়ে যায়। সেটি গোয়েন্দাদের বিষয়। আমাদের কাছে তন্ময়ের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য-প্রমাণ না থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি।’