বাগেরহাটে ৩ শিক্ষার্থীর ওপর হামলার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

আহত শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন। আজ রোববার বাগেরহাট প্রেসক্লাবেছবি: প্রথম আলো

বাগেরহাটে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ যুক্ত তিন শিক্ষার্থী হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। আজ রোববার বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা অভিযোগ করেন, কিছু বখাটে বাগেরহাট পৌর পার্কে তাঁদের ওপর বিনা কারণে হামলা করে। তারা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী।

ওই তিনজন হলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ঋত্বিক রায়হান, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিব রাদ ও বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের শিক্ষার্থী মো. ফারদিন। তারা পরস্পর বন্ধু। অবশ্য এই তিনজনের মধ্যে ঋত্বিক রায়হানের বিরুদ্ধে সরকার পরিবর্তনের পর পূর্ববিরোধের জের ধরে এক স্বজনের বাসাবাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে ঋত্বিক রায়হান বলেন, গত ৯ আগস্ট বিকেলে বাগেরহাট শহরের পৌর পার্কে তাঁরা কয়েকজন বন্ধু মিলে বসে ছিলেন। এ সময় বাসাবাটি এলাকার তিন-চারজন বখাটে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে থাকে। একপর্যায়ে হামলা করে। তখন তারাও ধাওয়া দেয়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা সেখান থেকে চলে যায়। তবে একটু পরেই আরও ১০-১২ জন দেশি অস্ত্র ও রড নিয়ে এসে তাঁদের মারধর ও কুপিয়ে আহত করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুক্ত থাকার জের ধরে এ হামলা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

হামলাকারীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, শহরের বাসাবাটি এলাকার বাবু, রনি, রাকিব, শামীম, জুয়েল, সজীব ওরফে গ্যাস সজীব, কালা সজীবকে তাঁরা চিনতে পেরেছেন। হামলাকারীরা এখনো এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাঁরা এই সন্ত্রাসীদের বিচার চান।

এদিকে আহত শিক্ষার্থী ঋত্বিক রায়হান ও তাঁর বাবা শেখ রায়হান মাহমুদের নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ উঠেছে। ঋত্বিক রায়হানের চাচাতো ভাই আকাশ মাহামুদ বলেন, ৬ আগস্ট দুপুরের পর চাচা ও চাচাতো ভাইয়ের নেতৃত্বে তাঁদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তাদের সঙ্গে জমি নিয়ে পূর্ববিরোধ ছিল। রাজনীতিতে যুক্ত না থাকলেও সরকার পতনের সুযোগে তারা এই হামলা-ভাঙচুর চালায়। এ সময় তারা হুমকিও দেয়।

বাগেরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক নেই। জেলায় কর্মসূচিতে সক্রিয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে হামলার শিকার তিনজনের আন্দোলনে যুক্ত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বর্তমানে আত্মগোপনে থাকা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত এক তরুণ প্রথম আলোকে বলেন, আহত ও হামলাকারীদের মধ্যে পুরোনো বিরোধ রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে এ হামলার কোনো সম্পর্ক নেই। সংবাদ সম্মেলন করা তিনজনের মধ্যে অন্তত দুজন ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আসতেন।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা মহানগরের সমন্বয়কদের একজন মিনহাজুল আবেদীন বলেন, বাগেরহাটে তাঁদের কোনো সমন্বয়ক নেই। খুলনা থেকে এবং সরাসরি বাগেরহাট এসে তাঁরা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলার খবর শুনেছেন। শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে বসে যৌক্তিক সমাধান ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনাসহ যে অভিযোগ রয়েছে, তাঁর রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হবে।

এদিকে সরকার পতনের পর থেকে জেলাজুড়ে বিশৃঙ্খলা, হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীসহ পাঁচ শতাধিক লোকের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিএনপি ও জামায়াত নেতারা সহিংসতায় না জড়ানোর বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেও হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট থামানো যাচ্ছে না। সরকার পতনের পর গত ছয় দিনে জেলায় পাঁচটি খুনের ঘটনা ঘটেছে।