‘দেশপ্রেমের পরীক্ষা’ দিচ্ছে চারঘাটের ১৭ হাজার শিক্ষার্থী
পরীক্ষায় ১৭টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এর মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল, ‘তোমার এলাকার তিনজন জীবিত ও দুজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম লেখ।’ পরীক্ষার আগেই এই প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হয়েছে। যাতে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে খোঁজ নিতে যায়। এ কাজ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ভেতরে দেশের জন্য ভালোবাসা তৈরি হবে।
এমন প্রত্যাশা থেকে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার প্রায় ১৭ হাজার শিক্ষার্থীকে দেশপ্রেমের পরীক্ষায় বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহরাব হোসেন। ইতিমধ্যে সে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে।
ইউএনওর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলার অষ্টম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে। এসব প্রশ্নপত্র উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা মা-বাবা, প্রতিবেশী এমনকি শিক্ষকদের কাছ থেকে জেনেও পরীক্ষায় বসতে পারবে। অর্থাৎ এ পরীক্ষায় এমন কিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে, যার উত্তর জানতে গিয়ে শিক্ষার্থীর ভেতরে দেশের জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা জাগবে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে উপজেলার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের তিনজন করে পরীক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হবে।
এ প্রশ্নপত্রে মোট ১৭টি প্রশ্ন রয়েছে। ১ থেকে ১৬ পর্যন্ত ক্রমিকের প্রশ্নগুলোর উত্তর হবে অল্প কথায়। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ৫ নম্বর করে এবং ১৭ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের জন্য রয়েছে ২০ নম্বর। এ বর্ণনামূলক প্রশ্নটি হচ্ছে ‘সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার—উক্তিটির আলোকে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ঘিরে তোমার আবেগ, অনুভূতি, স্বপ্ন, প্রত্যাশা সংক্ষেপে লেখ (১০০ শব্দের মধ্যে)।’
ছোট প্রশ্নগুলোর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কে ছিলেন, জাতীয় চার নেতার নাম কী? বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের চার দফা দাবিগুলো কী কী? বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর ওপর ভিত্তি করে রচিত গ্রন্থগুলোর নাম কী? জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পাঁচটি নিয়ম লেখ।
পরীক্ষার প্রশ্নে আরও ছিল—বীর প্রতীক, বীর উত্তম ও বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত, খেতাবপ্রাপ্ত দুজন নারী বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম উল্লেখ কর। মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের তিনজন অকৃত্রিম বন্ধুর নাম লেখ। সংবিধান দিবস কবে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের চারটি রাষ্ট্রীয় মূলনীতি কী? জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভের সাতটি স্তম্ভের ব্যাখ্যা কী। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তিনটি উপন্যাস ও দুটি নাটকের নাম লেখ।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চারঘাট উপজেলার ৫৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১২টি কলেজ, ১০টি মাদ্রাসা, ১৩টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ১৭ হাজার শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এ প্রশ্নপত্রের সঙ্গে একটি চিঠি প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। ১০ মার্চের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত ১০টি উত্তরপত্র ইউএনও কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। বাকি উত্তরপত্রগুলো ১৩ মার্চের মধ্যে পাঠাতে হবে। ২৬ মার্চ প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিনজন করে শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হবে।
চিঠিতে ইউএনও লিখেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সেই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে আগামী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার চারটি মূল ভিত্তি—স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ গড়ে তুলতে হবে।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আজ সোমবার (৬ মার্চ) উপজেলার সরদহ সরকারি কলেজে এ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। কলেজের শিক্ষক সাইদুর রহমান জানান, প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
ডাকরা কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রউফ বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন। একাডেমিক পরীক্ষার বাইরে এ ধরনের আয়োজন একদিকে শিক্ষার্থীদের কাছে আনন্দময় হবে, অপরদিকে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে তারা বাড়তি কিছু জানবে।
ইউএনও মো. সোহরাব হোসেন বলেন, প্রশ্নপত্রটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করে পরীক্ষায় লেখার সুযোগ পায়। যেভাবেই হোক, সে প্রশ্নের উত্তরগুলোর সঙ্গে শিক্ষার্থীরা পরিচিত হবে। বাড়ির পাশের দুজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে হয়তো সে কোনো দিনই পরিচিত হয়নি। এ পরীক্ষায় বসার খাতিরে সে হয়তো তিনজন মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে জানবে। দুজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার খোঁজ নেবে। এটাই হবে একটা অর্জন। তরুণ প্রজন্মের জন্য যা জরুরি। এ ভাবনা থেকেই তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন।