নাসিরনগরে কমিউনিটি ক্লিনিক
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে চলছে স্বাস্থ্যসেবা
মাথার ওপর পলেস্তারা পড়ায় বেশ কয়েকবার রোগীসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিদ্যুৎ, পানি ও পয়োনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনগুলো বেহাল। উপজেলার ২২টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ৩টির ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আরও ছয়টি কমিউনিটি ক্লিনিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বন্যায় একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনের মাটি ধসে গেছে। এসব পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে স্বাস্থ্যসেবার কাজ। কিন্তু এসব মেরামতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো উদ্যোগ নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে নাসিরনগর উপজেলায় ২২টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন নির্মাণ করা হয়। এক দশক না যেতেই উপজেলার নয়টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে তিনটি পরিত্যক্ত ও ছয়টি ঝুঁকিপূর্ণ।
উপজেলার ধরমন্ডল ইউনিয়নের দৌলতপুর, চাপড়তলা ইউনিয়নের কালিউতা ও গোয়ালনগর ইউনিয়নের কদমতলী কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ভলাকুট ইউনিয়নের খাগালিয়া, গোকর্ণ ইউনিয়নের জেঠাগ্রাম ও নূরপুর, পূর্বভাগ ইউনিয়নের নরহা, হরিপুর ইউনিয়নের আলিয়ারা এবং ধরমন্ডল ইউনিয়নের ধরমন্ডল কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে দৌলতপুর ও কালিউতা কমিউনিটি ক্লিনিক দুটির অবস্থা বেশি খারাপ।
এসব ক্লিনিকে প্রসূতিদের প্রসবপূর্ব, প্রসবপরবর্তী সেবা দেওয়াসহ জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার রয়েছেন। তাঁদের সহযোগিতার জন্য একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবারকল্যাণ সহকারী রয়েছেন। তবে তাঁরা সপ্তাহের তিন দিন ক্লিনিকে উপস্থিত থাকেন।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, উপজেলার কদমতলী, দৌলতপুর ও কালিউতা কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনগুলোর দেয়ালের চারপাশে ফাটল দেখা দিয়েছে। দৌলতপুরের ক্লিনিকের পেছনের দেয়াল ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দরজা-জানালাও ভাঙে গেছে। কদমতলীর কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনের এক পাশ ভেঙে গেছে এবং ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। ভেতরে ময়লার স্তূপ। মাথার ওপর পলেস্তারা পড়ায় বেশ কয়েকবার রোগীসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিদ্যুৎ, পানি ও পয়োনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থাও নেই। যেন ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এসব সমস্যা সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসাসেবার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ এসব মেরামতে উদ্যোগ নিচ্ছে না।
দৌলতপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার তাহমিনা আক্তার বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের পেছনের অংশের মাটি সরে গেছে। তিন–চার বছর ধরে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় পুরো ভবনটি ভেঙে প্রাণহানি ঘটতে পারে। তিনি বলেন, ভবনের ভেতরে নেই বিদ্যুৎ। পানি ও পয়োনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ঝুঁকি নিয়েই এখানে কাজ করতে হচ্ছে।
কালিউতা কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মোছা. শামছুন্নাহার বলেন, ‘ক্লিনিক ভবনের এক পাশ ভেঙে গেছে। গদুই বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ এ ক্লিনিকে কাজ করে যাচ্ছি। অন্য জায়গায় ঘর ভাড়া নিয়ে কাজ চালিয়ে যাব সেই নির্দেশও কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অভিজিৎ রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো মেরামতসহ নতুনভাবে নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।’