সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বললেন, ‘ছাত্রলীগ নিয়ে বলার সাহস নেই’

কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং দলীয় অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের মতবিনিময় সভা। সোমবার সন্ধ্যায় সিলেট সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে
ছবি: সংগৃহীত

‘ছাত্রলীগ তোমাদের অনেক কথা শুনি। তোমাদের বলার আমার সাহস নেই, ইজ্জত থাকবে না আমাদের।’ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে সিলেটের ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এমন মন্তব্য করেছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সিলেট সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ দলীয় অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন। এ বক্তব্যের একটি ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের সীমান্ত এলাকা দিয়ে চিনি চোরাচালানের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দলীয় সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সংশ্লিষ্টতা আলোচনায় আসে। এর মধ্যে বিয়ানীবাজার উপজেলায় নিলামে কেনা চিনি ৮ জুন ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ১৪ জুন বিয়ানীবাজার উপজেলা ও বিয়ানীবাজার পৌর শাখার কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরে ওই ঘটনায় মামলা করার পর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পৌর শাখার সভাপতিকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। এ ছাড়া নিজ দলের মধ্যে বিভক্তির জেরে পাল্টাপাল্টি হামলাসহ নানা অভিযোগ ওঠে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন

গতকাল সন্ধ্যার মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক; সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক; দলের সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ; সিলেটের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান; সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী; আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম; কেন্দ্রীয় সদস্য আজিজুস সামাদ; সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান; মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ। এ সময় সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান এবং সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদও উপস্থিত ছিলেন।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ওই সভায় বলেন, ‘অনেক কথা সিলেট শহরে শুনি। সিলেট শহরে হাঁটতে পারি না। ছাত্রলীগ আমাদের ছোট ভাই। আমরাও ছাত্রলীগ করেছি। আমরা ছাত্রলীগ করে দীর্ঘ বছর ধরে রাজনীতি করছি। সুতরাং আমরা কখনো কোনো বদনামের বোঝা নিয়ে চলিনি। ছাত্রলীগ থেকে আজকে আওয়ামী লীগের এই পর্যায়ে এসেছি।’ ছাত্রলীগসহ দলীয় অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেতুল্য না হলেও আমরা ভাই ভাই। আমরা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার লীগ করি। আমাদের একটিই কাজ আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশিত পথ যেটি আসবে, আমাদের অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। আমাদের সামনে সোজা দিন নয়। মনে রাখতে হবে, কঠিন দিন সামনে আছে। আমাদের কঠিন দিন মোকাবিলা করতে হলে আমাদের সঠিক পথে চলে, ভালো পথে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।’

আরও পড়ুন
সিলেট সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং দলীয় অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের মতবিনিময় সভা। সোমবার সন্ধ্যায়
ছবি: সংগৃহীত

ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশে মাসুক উদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘তোমরা আমার ছোট ভাই। তোমাদের আমি শাসন করতে পারি, করিও। সুতরাং আমার কথায় কেউ মন খারাপ করার কারণ নেই। তোমাদের ভবিষ্যতের জন্যই বলছি, পরে বলবে মাসুক ভাই বলছিলেন, না শুনে ভুল করছি। নেতা বলে গিয়েছিলেন, তাঁর কথা শুনলে আমাদের এই অবস্থা হতো না।’ সব সময় ভালো চিন্তার সঙ্গে খারাপ দিকও চিন্তা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা হলে ওটা হবে—বিষয়টি চিন্তা করতে হবে।’

মাসুক উদ্দিন আহমদ গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী ছিলেন। তবে তিনি নির্বাচনে ফুলতলী হুজুর হিসেবে পরিচিত প্রয়াত আল্লামা আবদুল লতিফ চৌধুরীর ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর কাছে পরাজিত হয়েছেন।

আরও পড়ুন

মাসুক উদ্দিন আহমদের বক্তব্যের ব্যাপারে কথা বলতে আজ বিকেলে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলামের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কোন প্রসঙ্গে এ বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি তাঁদের বোধগম্য নয়। তবে তাঁর সঙ্গে একাধিকবার ব্যক্তিগতভাবে দেখা করে সিলেট ছাত্রলীগের নেতারা পরামর্শ নিয়েছেন।

বিকেলে মাসুক উদ্দিন আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নেতারা সরাসরি কিছু না বললেও একমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বক্তব্যে সার্বিক বিষয় নিয়ে বলেছি। পারসোনাল কোনো বিষয়ে কথা বলিনি। আওয়ামী লীগের ইমেজ রক্ষা করার জন্য বলেছি। যেহেতু আমি সিলেটের, নানাজনের কাছে নানা ঘটনা শুনি। নানা ঘটনা দেখি। ঘটনাগুলো স্পেসিফাই না করে কথা বলেছি। দলকে এগিয়ে নিতে হলে স্বচ্ছভাবে চলার ব্যাপারে বলেছি। ক্ষমতায় এসেছি ভালো করার জন্য, নষ্ট করার জন্য নয়। নষ্ট করলে ভবিষ্যতে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।’