আত্রাই নদে সেতু
মেয়াদ বাড়লেও শেষ হয়নি কাজ
এক বছর কাজ বন্ধ থাকার পর দুই সপ্তাহ আগে আবার কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও খানসামা উপজেলাকে বিভক্ত করেছে আত্রাই নদ। দুই উপজেলার মানুষের যাতায়াতের জন্য পাল্টাপুর ইউনিয়নের মধুবনপুর এলাকায় নদের ওপর ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। যদিও প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে আড়াই বছর আগে। এক বছর কাজ বন্ধ থাকার পর দুই সপ্তাহ আগে আবার কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় স্থানীয় মানুষদের ভোগান্তি আর শেষ হচ্ছে না। স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে সেতুর কাজ শেষ হচ্ছে না। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বলছেন, একদিকে করোনা পরিস্থিতি, অন্যদিকে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় কাজ শেষ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেতুর প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ‘পল্লি সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় বীরগঞ্জ উপজেলায় আত্রাই নদে ৪৫০ মিটার সেতুটির নির্মাণকাজের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুরমা এন্টারপ্রাইজ কাজটির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়।
ব্যয় ধরা হয় ৪৪ কোটি ১৬ লাখ ৪২ হাজার ২৬৩ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ করার সময় ২০২১ সালের ২ এপ্রিল। তবে নির্ধারিত সময়ে নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। দ্বিতীয়বারের মতো চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পে মেয়াদ বাড়ায় এলজিইডি।
গত সোমবার দুপুরে সেতু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেতুর সব পিলার স্থাপন হয়েছে। সেতুর পাঁচটি অংশের ২টির ঢালাই হয়েছে। চলছে তৃতীয় গার্ডারের রড বাঁধাইয়ের কাজ। ১৪ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়। যদিও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির দাবি, ৩৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন।
এদিকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মোটরসাইকেলসহ মানুষ নদ পার হন। নদ পারাপার হওয়া কয়েকজন জানান, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সাইকেল, মোটরসাইকেল এই নৌকা দিয়েই পারাপার হয়। নদের পূর্ব দিকে খানসামা উপজেলার মধুবনপুর, নেউলা, কাইয়ুমপুর, দুহুশুহ, ভান্ডারদহ, খামারপাড়া ও জোয়াইরপাড়া গ্রাম। আর পশ্চিমে মধুবনপুর, বাছারগ্রাম, রাজিবপুর, ভোগডোমা, রঘুনাথপুর, ছয়গুটি, ধুনট ও সনকা গ্রাম। উভয় পারের গ্রামে ৫০ হাজারের বেশি লোকের বসবাস।
কথা প্রসঙ্গে নৌকার মাঝি নুরুন্নবী (৩৭) জানান, সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মানুষ ও যানবাহন নৌকায় পারাপার করেন। প্রতিদিন ৪৫-৫০ট্রিপ হয়। ঘাট ইজারা নিয়েছেন ২৭ লাখ টাকায়। অনেক সময় যাত্রীদের আধা ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। যাত্রী বেশি না হলে নৌকা ছেড়ে লাভ হয় না।
নদ পার হয়ে খানসামা উপজেলার ঘাটে কথা হয় ভ্যানচালক মোস্তাফা হকের (৫২) সঙ্গে। তিনি বলেন, সেতুটি হলে বীরগঞ্জ যেতে রাস্তা পড়বে ৭ কিলোমিটার। ১২ কিলোমিটার রাস্তা অতিরিক্ত ঘুরতে হয় তাঁদের।
পাল্টাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য এজাজুল হক বলেন, খানসামা থেকে এক বস্তা ধান বা আলু আনতে ভ্যান ভাড়া দিতে হয় ৫০টাকা। সেতু চালু হলে ২৫ টাকা ভাড়ায় বীরগঞ্জ আসবে। খানসামা ধান ও সবজি চাষে প্রসিদ্ধ উপজেলা। সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে সবচেয়ে বেশি উপকার হবে ওই এলাকার কৃষকদের।
সেতু নির্মাণে ধীরগতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মাসুম আলী বলেন, ‘৪টি স্প্যানের কাজ শেষে হয়েছে। ৫ নম্বর স্প্যানের কাজ চলছে। করোনা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি—সবকিছু মিলিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছি। আগামী বছর আগস্টে ব্রিজ হ্যান্ডওভার করব।’
দিনাজপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান বলেন, সেতুটির ৫৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। দুইবার সময়ও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে কাজের অগ্রগতি হতাশাজনক।