কুষ্টিয়ায় আ.লীগ নেতাকে বাড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন, অভিযোগ জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেনকে তুলে নিয়ে বাড়িতে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান নিজ বাড়িতে আটকে তাঁকে নির্যাতন করেন বলে ওই নেতা অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী খোকসা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ঘটনার পর খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরে যান আলমগীর। তার আগে থানায় অভিযোগ দেন। আলমগীর হোসেনকে ভয় দেখিয়ে মোটরসাইকেলে তুলে নেওয়ার ৩ মিনিটের একটি ভিডিও ফুটেজ প্রথম আলোর কাছে এসেছে।
আলমগীরের অভিযোগ, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সদর উদ্দিন খানের ভাই রহিম খান চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন। নির্বাচনে তাঁর পক্ষে কাজ করতে বলেন সদর উদ্দিন খান। এ ছাড়া বর্তমান চেয়ারম্যান ও খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আক্তারের পক্ষে নির্বাচন করতে নিষেধ করেন। সেটি না মানায় তাঁকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা আমার জানা নাই। আমি বাড়িতে ছিলাম না। উপজেলা নির্বাচনের তফসিল হয়েছে। এখন কত কথা শোনা যাবে, তার সব কথা তো সত্যি নয়।’
আলমগীর হোসেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জের পক্ষে নৌকার নির্বাচন করেন। সেলিম স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রউফের কাছে হেরে যান। খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আক্তারও সেলিমের পক্ষে কাজ করেছিলেন।
আলমগীর হোসেনের ভাষ্য, আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার শোমসপুর এলাকায় এক ব্যক্তির ধানের চাতালে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় দুটি মোটরসাইকেল এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলে, ‘বড় কাকা (সদর উদ্দিন খান) ডাকছে, যেতে হবে।’ একপর্যায়ে রহিম খানের ছেলে রবিনসহ চারজন তাঁকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে একটি মোটরসাইকেলের মধ্যে বসিয়ে তুলে নিয়ে যান। অন্য যুবক তাঁর মোটরসাইকেলটি নিয়ে আসেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আলমগীর বলেন, দেড় কিলোমিটার দূরে শোমসপুর গ্রামে সদর উদ্দিন খানের বাড়িতে দোতলার একটি ঘরে তাঁকে আটকে রাখা হয়। এ সময় লাঠি হাতে সদর উদ্দিন উচ্চ স্বরে তাঁর ভাইয়ের পক্ষে নির্বাচন করতে হুমকি দেন। কার্যালয় থেকে সেলিম আলতাফ ও বাবুল আক্তারের ছবি নামিয়ে রাখতে বলেন। এ সময় লাঠি দিয়ে দুই থেকে তিনটি বাড়ি দেন। একপর্যায়ে বিছানায় থাকা একটা অস্ত্র হাতে নেন সদর উদ্দিন খান। এভাবে ২০ থেকে ২৫ মিনিট চলে যায়। একপর্যায়ে কোরআন শরিফ নিয়ে শপথ করান এবং কাউকে এ বিষয়ে বলতে নিষেধ করেন। এ সময় একটি ফোন এলে দরজা খুলে দেওয়া হয়। তিনি দ্রুত বাইরে এলে রবিন আবার মোটরসাইকেলে চাতালের সামনে রেখে যান। পরে থানা-পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। সন্ধ্যায় তিনি নিজে বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ করেন।
খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক শাহিনা খানম বলেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের ডান হাত ও এক পায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান নিজে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন। মুখের মধ্যে পিস্তল ঢুকিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। তাঁর ভাই রহিম খানের পক্ষে উপজেলা নির্বাচন করতে শপথ করিয়েছেন। বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হচ্ছে। সদর উদ্দিন খানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকার লোকজন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেছে।
খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননূর যায়েদ প্রথম আলোকে বলেন, একটা অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।