ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের গঠন করা তদন্ত কমিটি। আজ বুধবার বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে তদন্ত শুরু হয়। তদন্তের প্রথম দিনে পুলিশ, আনসার, পোলিং এজেন্টসহ ৯০ জনের বক্তব্য রেকর্ড করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
গত রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা ইতিমধ্যে ভোটের ফলও প্রকাশ করেছেন। তবে ভোটের দিন কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে প্রকাশ্যে সিল মারার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি ফলাফলের গেজেট প্রকাশ স্থগিত রাখার কথা জানায়।
তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসককে প্রথম আলোয় প্রকাশিত ভোটে অনিয়মের খবরের বিষয়ে তদন্ত করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহগীর আলম জেলা প্রশাসনের পক্ষে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিনকে নির্দেশ দেন। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. জয়নাল আবেদীনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাউকে তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়নি। তদন্ত কমিটির দুই সদস্য আজ বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য শোনেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপনির্বাচনে আশুগঞ্জ উপজেলার বড়তল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তালশহর পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নূরানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রের ৪ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ২৮ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ৪৬ জন পোলিং কর্মকর্তা ছাড়াও কেন্দ্রে কর্তব্যরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের বক্তব্য শোনে তদন্ত কমিটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রথম আলোকে বলেন, অনিয়ম নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে থাকা ব্যক্তিদের খুঁজছে তদন্ত কমিটি। অনিয়মের পূর্ণাঙ্গ চিত্র সম্পর্কে জানতে অন্য কেন্দ্রের অনিয়মের ছবিও খুঁজছে তারা। আজ আশুগঞ্জের চারটি কেন্দ্রের পুলিশ, আনসার, পোলিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ ৯০ জনের বক্তব্য শুনেছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া উপজেলার যাত্রাপুর হাফিজিয়া নূরানিয়া মাদ্রাসার সবার বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের করা তদন্ত কমিটির সদস্য ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে আমরা একসঙ্গে কাজ করলেও পৃথকভাবে সাক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে। জেলা ও পুলিশ প্রশাসন পৃথক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রথম দিন পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং পোলিং কর্মকর্তার বক্তব্য নিয়েছে। আরও ৫০-৬০ জনের বক্তব্য নেওয়া হবে।’
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।
তবে নির্বাচন কমিশন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতি আস্থা নেই জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা বলেছেন, ‘শুনেছি, এসব ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে। আমি বিস্মিত হয়েছি। যাঁদের ছত্রচ্ছায়ায় অপকর্মগুলো হলো, তাঁরাই যদি তদন্তের মালিক হন, তাহলে এই তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এই তদন্ত কমিটি আমি মানি না। কারণ, তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন।’ তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তাঁদের দিয়ে তদন্ত করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করে, তাহলে তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন।
৫ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম ৬৬ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জিয়াউল হক মৃধা পান ৩৭ হাজার ৫৫৭ ভোট।