পরীক্ষা শুরুর দেড় ঘণ্টা আগে বাবার মৃত্যু, কাঁদতে কাঁদতে পরীক্ষার হলে শান্তা
এইচএসসি পরীক্ষার্থী শান্তা ইসলাম পরীক্ষা শুরু সকাল ১০টা থেকে। এর দেড় ঘণ্টা আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মারা যান তাঁর বাবা। বাবার মৃত্যুর পর শোক প্রকাশের খানিকটা সময়ও মেলেনি তাঁর। কারণ, তাঁর পরীক্ষাকেন্দ্র বাড়ি থেকে আনুমানিক ১০ কিলোমিটার দূরে। বাবার লাশ বাড়িতে রেখেই শান্তাকে যেতে হয় পরীক্ষা দিতে।
শান্তা ইসলাম (১৮) আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজ কামারগ্রামের মানবিক শাখার শিক্ষার্থী। শান্তা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের পানাইল গ্রামের মো. মাহামুদ হোসেনের মেয়ে। আলফাডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজে তিনি পরীক্ষা দিচ্ছেন। আজ মঙ্গলবার ছিল তাঁর ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষা।
স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাহামুদ শেখ (৬২) মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে নিজ বাড়িতে মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে বাড়িজুড়ে মাতম শুরু হয়। এর মধ্যে কাঁদতে কাঁদতে এক আত্মীয়ের সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা দেন শান্তা।
শান্তার স্বজনেরা বলেন, মাহামুদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে শান্তা ছোট। একমাত্র মেয়ের বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ে বাবা মাহামুদের বেশ চিন্তা ছিল। বাবার প্রতি সম্মান জানাতে শান্তা মঙ্গলবার এ শোকের মধ্যেও পরীক্ষা দিতে যান। পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি সহপাঠী ও কেন্দ্র সচিবও শান্তাকে সহযোগিতা করেন। শান্তা পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরে আসার পর বিকেলে (বাদ আসর) নিজ বাড়িতে মাহামুদ শেখের লাশ দাফন করা হবে।
আলফাডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও পরীক্ষাকেন্দ্রের সচিব শাহ্ মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, পরীক্ষার্থী শান্তার বাবার মৃত্যুর বিষয়টি তাঁরা জানেন। তবে শান্তার পরীক্ষা বিশেষ ব্যবস্থায় নেওয়া হয়নি। বসে সবার সঙ্গে পরীক্ষা দিলে শান্তার মন ভালো হবে ভেবে তাঁকে আলাদা কক্ষে নেওয়া হয়নি। তাঁরা শান্তাকে উৎসাহ দিয়েছেন। তবে অন্য পরীক্ষার্থীরা তাঁকে বলেছেন, শান্তা পরীক্ষা দিতে দিতে একাধিকবার কেঁদেছেন।
আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এম এম মজিবুর রহমান জানান, ‘কেন্দ্র সচিবের মাধ্যমে শান্তার খোঁজখবর নিয়েছি। বাবাকে হারানো যেকোনো সন্তানের জন্য কষ্টদায়ক। তারপরও শান্তা নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।’
পরীক্ষায় দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রজত বিশ্বাস বলেন, শান্তার বাবার মৃত্যুর বিষয়টি তাঁরা পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার পর জানতে পেরেছেন। সহপাঠীদের সঙ্গে বসেই পরীক্ষা দিয়েছেন শান্তা।