যেন সিনেমার কাহিনি। ৬০ ফুট ওপর থেকে লাফ দিয়ে এক বন্দী পালিয়ে যান চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে। ঘটনাটি তিন বছর আগের। এ ঘটনায় করা মামলায় আসামি ফরহাদ হোসেন ওরফে রুবেলের বিরুদ্ধে এখনো বিচার শুরু হয়নি। মামলার নথিতে শুধু তারিখ পড়ছে।
সর্বশেষ গত ২৬ জুন বগুড়া কারাগারের ছাদ ছিদ্র করে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি নজরুল ইসলাম, আমির হোসেন, মো. জাকারিয়া ও ফরিদ শেখের পালানোর ঘটনা ঘটেছে। পরে তাঁরা চারজন গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় মামলা হয়। বগুড়ার ঘটনার পর তিন বছর আগে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে ফরহাদের পালানোর ঘটনাটি আলোচনায় এসেছে।
মাত্র ১৩ মিনিটেই ফরহাদ হোসেন সেবার কারাগার থেকে পালিয়ে যান। ঘটনার দিন ২০২১ সালের ৬ মার্চ ভোর ৫টা ১৬ মিনিটে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের পঞ্চম তলার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বের হন তিনি।
সেদিন ভোর সোয়া পাঁচটায় বিশেষ ওয়ার্ডের তালা খোলার পর ফরহাদ কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের নিচে নেমেছিলেন। এরপর প্রায় ২০০ গজ দূরে সংস্কারাধীন ৩২ নম্বর সেল ভবনের কাছে যান। ওই ভবনটি দোতলা থেকে পাঁচতলা করা হচ্ছিল ওই সময়ে। ৩২ নম্বর সেল ভবনের মূল দরজা বন্ধ থাকায় তিনি জানালার গ্রিল দিয়ে দ্বিতীয় তলায় ওঠেন। সেখান থেকে সিঁড়ি বেয়ে ওঠেন চারতলার ছাদে। এরপর লাফ দিয়ে ৬০ ফুট ওপর থেকে গিয়ে পড়েন কারাগারের সীমানার ১৮ ফুট উঁচু দেয়ালের (প্যারামিটার ওয়াল) বাইরে। ভবন থেকে ২২ ফুট দূরে এই দেয়ালের অবস্থান। একটু দূরে পাঁচ ফুট উঁচু আরেকটি সীমানাপ্রাচীর পার হয়ে ফরহাদ কারাগারের বাইরে যান। সব মিলিয়ে তাঁর ১৩ মিনিট সময় লাগে। সেখান থেকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে যান সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। ওই দিন ট্রেনে প্রথমে ঢাকা, পরে নরসিংদীতে ফুফুর বাড়িতে চলে যান। পরে পুলিশ ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন কারাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ একই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ফরহাদকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, তৃতীয় আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল ফরহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর জন্য তারিখ নির্ধারণ ছিল, কিন্তু হয়নি। পরে আগামী ২৮ অক্টোবর পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। এ পর্যন্ত সাতটি তারিখ পড়েছে। প্রতিবারই রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সময়ের আবেদন করা হয় আদালতে। অথচ ধার্য দিনে আসামিও হাজির থাকেন আদালতে।
জানতে চাইলে মামলাটি পরিচালনাকারী সরকারি কৌঁসুলি মঈন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আগামী ধার্য দিনে অভিযোগ গঠনের চেষ্টা রয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।
জেলপালানো ফরহাদ বর্তমানে চট্টগ্রাম কারাগারে রয়েছেন। তাঁর মাথায় সাদা নয়, আছে লাল টুপি। পালানোর কারণে কারাবিধি অনুযায়ী তাঁর মাথায় ‘লাল টুপি’ পরিয়ে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
কারাবিধি অনুযায়ী, যেসব বন্দী পালিয়ে গিয়ে ধরা পড়েন, তাঁদের মাথায় লাল টুপি এবং শাস্তির কারণে রেয়াত-সুবিধাবঞ্চিত বন্দীদের নীল রঙের টুপি পরানো হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী কারাগার থেকে পালানোর কারণে বন্দী ফরহাদ হোসেনকে লাল টুপি পরানো হয়েছে। এ কারাগারে তিনিই একমাত্র লাল টুপি পরা বন্দী।
২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে সদরঘাট থানার এসআরবি রেলগেট এলাকায় আবুল কালাম আবু নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীর বুকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। পরদিন সকালে কালাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান। ওই ছুরিকাঘাতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ওই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি কারাগারে আসেন ফরহাদ।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন জানান, ফরহাদকে কড়া পাহারায় রাখা হয়েছে, যাতে তিনি কারাগার থেকে আর পালাতে না পারেন।