পঞ্চগড় চিনিকলের জমি দখলে বিএনপির নেতা
পঞ্চগড়ের বোদা পৌরসভা এলাকায় পঞ্চগড় চিনিকলের সাবজোনের এসইডিওর কোয়ার্টার চত্বরের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় চিনিকল কর্তৃপক্ষ বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সেনা ক্যাম্প ও বোদা থানা–পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
ওই ব্যক্তির নাম আরিফুর রহমান। তিনি বোদা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। গত বুধবার পৌরসভার থানাপাড়া এলাকায় ২০ শতাংশ জমিতে ছোট্ট টিনের চালাঘর তুলে ক্রয়সূত্রে জমির মালিক দাবি করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন আরিফুর। দখল করা জমিতে কিছু গাছের চারাও লাগানো হয়েছে।
কাউন্সিলর আরিফুরের দাবি, চিনিকল কর্তৃপক্ষ ক্রয়ের আগেই জমিটি তাঁর বাবা আবদুল কুদ্দুসের নামে কেনা হয়েছিল। দীর্ঘদিন তাদের বেদখলে থাকা ওই জমির মূল মালিক তাঁর বাবা।
ওই জমি সরকারি সম্পত্তি। সেখানে আমাদের সাবজোনের কোয়ার্টার ছিল। ১৯৭৭ সালে কেনা ওই জমিতে আমাদের স্থাপনা আছে।
গত রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বোদা বাজার থেকে থানা যাওয়ার পথের পাশে এই জমিতে চিনিকলের সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে একটি পরিত্যক্ত বাসভবন। সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে ওই বাসভবনের পূর্ব পাশের ফাঁকা জায়গাটিতে ছোট্ট একটি টিনের চালাঘর তুলে দখল নেওয়া হয়েছে। রোপণ করা হয়েছে বেশ কিছু গাছের চারা। জমির সামনের দিকে সড়কের পাশে একটি গাছে লাগানো হয়েছে সাইনবোর্ড আকারের একটি প্যানা ব্যানার। সেখানে লেখা রয়েছে ‘ক্রয়সূত্রে এই জমির মালিক মো. আবদুল কুদ্দুস’। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে একটি মুঠোফোন নম্বর।
চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭৭ সালে চিনিকলের ক্রয় করা ২০ শতাংশ জমির ওপর পঞ্চগড় চিনিকলের বোদা সাবজোনের এসইডিওর বাসভবন ছিল। চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরে জমিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ঘটনায় দেশের অস্থিতিশীল অবস্থাকে সুযোগ নিয়ে ৭ আগস্ট দিনেদুপুরে জমিটি দখলে নিয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিকে ওই সাইনবোর্ডে ‘ক্রয়সূত্রে এই জমির মালিক মো. আরিফুর রহমান, কাউন্সিলর, ১ নম্বর ওয়ার্ড, বোদা পৌরসভা’ লেখাসংবলিত একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়। এরপর রোববার সকালে সেই সাইনবোর্ড বদলে ফেলা হয়। নতুন করে দেওয়া সাইনবোর্ডে ‘ক্রয়সূত্রে এই জমির মালিক মো. আবদুল কুদ্দুস’ লেখা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা দেখে আসছেন, জমিটি চিনিকলের। কিন্তু বুধবার দিনেদুপুরে দখল করতে দেখে অবাক লেগেছে তাঁদের। কাউন্সিলর আরিফুর রহমান এখানে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছেন।
পঞ্চগড় চিনিকলের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ওই জমি সরকারি সম্পত্তি। সেখানে আমাদের সাবজোনের কোয়ার্টার ছিল। ১৯৭৭ সালে কেনা ওই জমিতে আমাদের স্থাপনা আছে। দখলেও ছিল। এমনকি বাংলা ১৪৩০ সাল পর্যন্ত খাজনা-খারিজ হালনাগাদ আছে। তারপরও দেশের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে জমিটি দখল করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে ইউএনও শাহরিয়ার নজির মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, চিনিকল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে তারা যেন দখল না ছাড়ে। কেউ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিলেই তো আর মালিক হয়ে যায় না।