কালকিনিতে তিন খুনের ৩৫ ঘণ্টা পরও মামলা হয়নি, আতঙ্কে এলাকা পুরুষশূন্য

কালকিনিতে সংঘর্ষের পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আবার সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টহল দিচ্ছে। শনিবার দুপুরে উপজেলার খাসেরহাট এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের কালকিনিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় বাবা-ছেলেসহ তিনজনকে হত্যার ৩৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলা হয়নি। এ ঘটনায় আজ শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে ঘটনার পর থেকে এখনো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আতঙ্কে এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। আবার সংঘর্ষ বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এলাকায় পুলিশ ও সেনাসদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, নিহত তিনজনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে হস্তান্তরের পর আজ দুপুরে দাফন করা হয়েছে। পরিবার এখনো থানায় অভিযোগ দিতে আসতে পারেনি। হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের থানায় এজাহার দিলে মামলা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

গতকাল শুক্রবার ভোর ছয়টার দিকে উপজেলায় বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের মধ্যেরচর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় হাতবোমার আঘাতে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) একজন সদস্য, তাঁর ছেলে ও একজন দিনমজুর নিহত হন। আহত হন আরও অন্তত ১০ জন। এ সময় বেশ কয়েকটি বসতঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন মধ্যেরচর এলাকার মতিন শিকদারের ছেলে আক্তার শিকদার (৪২), আক্তার শিকদারের ছেলে মারুফ শিকদার (২০) ও খুনেরচর গ্রামের সিরাজুল চৌকিদার (৩৫)। আক্তার শিকদার বাঁশগাড়ী ইউপির ৮ নম্বর সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ছিলেন। আর সিরাজুল ছিলেন পেশায় কৃষক ও দিনমজুর।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মধ্যেরচর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ফকির ও শিকদার বংশের লোকজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এলাকা ছাড়েন আওয়ামী লীগের নেতা আক্তার শিকদার। গতকাল ভোররাতে শরীয়তপুরের নতুন বাজার এলাকা দিয়ে তিনি তাঁর লোকজন নিয়ে মধ্যেরচর এলাকায় প্রবেশ করেন—এমন খবরে এলাকায় মাইকিং করে লোক জড়ো করেন জলিল ফকিরের লোকজন। পরে আক্তার ও জলিলের লোকজন দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় বেশ কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করা হয়। হাতবোমার আঘাতে আক্তার শিকদার ঘটনাস্থলেই নিহত হন। বোমায় গুরুতর আহত হন আক্তারের ছেলে মারুফ শিকদার। উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান সিরাজুল চৌকিদার নামের আরেকজন।

আরও পড়ুন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাঁশগাড়ী এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, শিকদার ও ফকির—দুই বংশের লোকজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নিহত ইউপি সদস্য প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। কারণ, তিনি আগে ফকির বংশের লোকজনের ওপর হামলা-নির্যাতন করেছিলেন।

এদিকে গতকালের ঘটনার পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের খাসেরহাট, পূর্বপাড়, মধ্যেরচরসহ পাঁচটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, চারপাশের পরিবেশ থমথমে। স্থানীয় সব দোকানপাট বন্ধ। হত্যাকাণ্ডের বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাননি। গ্রামগুলোয় পুরুষ মানুষ নেই বললেই চলে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাসদস্যরা টহল দিচ্ছেন।

স্থানীয় বাঁশগাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিনজন হত্যার ঘটনার পর থেকে সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছেন। পুরো পরিবেশ থমথমে। সবাই ভয়ের মধ্যে আছে। অনেক গ্রাম পুরুষশূন্য। মামলা ও আটকের ভয়ে অনেকে পালিয়ে গেছেন। বিনা অপরাধে অনেকে আসামি হবেন—এ আশঙ্কা আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা কাজ করছেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সঠিক আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবেন।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ভাস্কর সাহা আজ শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, তিন খুনের ঘটনাটি পুলিশ গুরুত্বসহকারে দেখছে। থানার পুলিশ সদস্যদের কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। আশা করছেন, দ্রুত মূল আসামিরা আইনের আওতায় চলে আসবেন। আসামিদের ধরতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।