চট্টগ্রাম নগরের সাগরিকা এলাকার বাসিন্দা মো. খোকন আলম পেশায় খুচরা ব্যবসায়ী। বয়স তাঁর ত্রিশের কাছাকাছি। এ ভোটার জানালেন, তাঁর আসনে (চট্টগ্রাম-১০) স্বতন্ত্র ও নৌকার প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। তবে ভোটের দিন পরিস্থিতি বুঝে কেন্দ্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন। খোকন গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। যদি আজ রাতে বা আগামীকাল সকালে কোনো ঝামেলা হয়, তবে কেন্দ্রে যাওয়ার ইচ্ছা নেই।
আবার চকবাজারের বাসিন্দা আবদুল হামিদ তেমন একটা আগ্রহ দেখালেন না। ষাটোর্ধ্ব এ ভোটার প্রথম আলোকে বলেন, এ নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে গেছে কারা নির্বাচনে জিতবেন। ফলে ভোট দিতে গিয়ে সময় নষ্ট করার মানে নেই।
রাত পোহালেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত প্রচারণা চালিয়েছেন প্রার্থীরা। এবার চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে প্রার্থী হয়েছেন ১২৬ জন। মোট ভোটার ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৩৯৭। এর মধ্যে নারী ভোটার ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৫১।
১৬ আসনের মধ্যে ছয়টিতে নৌকা ও লাঙ্গল (হাটহাজারীতে) প্রতীকের প্রার্থীরা অনেকটা নির্ভার।
বাকিগুলোর মধ্যে ৯টি আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি একই দলের স্বতন্ত্ররাও নির্বাচন করছেন। এর মধ্যে হামলা, পাল্টাপাল্টি মামলা ও প্রার্থীদের নিজেদের মধ্যে বিষোদ্গারের কারণে চট্টগ্রাম-১,১০, ১১,১২, ১৫ ও ১৬—এই ছয় আসন আলোচনায় এসেছে।
এ ছয় আসনের ১৫ ভোটারের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা। এঁদের একজন মো. মুজিবুর রহমানের বয়স এবার ৭৫ ছুঁয়েছে। চট্টগ্রাম-১১ আসনের দক্ষিণ পতেঙ্গার খেজুরতলা এলাকার এ বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, জমজমাট না হলেও তাঁর আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক ও নৌকার প্রার্থী এম এ লতিফের মধ্যে লড়াই হবে। তিনি ভোট দিতে যাবেন। তবে এ সিদ্ধান্ত পাল্টেও যেতে পারে।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলামের বিপক্ষে জাতীয় সংসদের হুইপ একই দলের সামশুল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। প্রচারণার শুরু থেকে এ পর্যন্ত সামশুলের ওপর ২২ বার হামলা ও প্রচারে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সর্বশেষ গত শনিবার ঈগল প্রতীকের প্রার্থী সামশুলের গাড়িবহরে গুলির ঘটনা ঘটে। তাঁর ভাই-বোনকে বেধড়ক মারধর করা হয়। বিভিন্ন ঘটনায় পাঁচটি মামলা হয় পটিয়া থানায়। এসব ঘটনায় ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কিত পটিয়ার পরিবহন শ্রমিকনেতা মোহাম্মদ মিয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একের পর এক হামলা-মামলার এসব ঘটনা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের লক্ষণ নয়। ভোটের দিন এসব ঘটলে কেন্দ্রে যাবেন না তিনি।
চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া ও সাতাকানিয়া উপজেলা) আসনে ১৫৭টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। অন্তত ৫০টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য নৌকা প্রতীকের আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মোতালেবের সমর্থকদের মধ্যে এ নিয়ে অন্তত ১০টি হামলা, ভাঙচুর ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন।
ভোটের পরিবেশ কেমন, জানতে চাইলে সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নের মহাজনপাড়া এলাকার চায়ের দোকানি আবদুল ওয়ারেস (৬৫) বলেন, ‘আগেরবারের নির্বাচনে ভোট আগেই হয়ে গিয়েছিল। মনে হয় এবারও তাই হবে। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে লাভ কী হবে?’
প্রচারণা শুরু হওয়ার পর চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে কয়েক দফা হামলার ঘটনা ঘটে। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুব উর রহমান।
তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন। ইছাখালী ইউনিয়নের বামনসুন্দর খাল স্লুইসগেটে একটি চায়ের দোকানে বসে কথা হয় অটোরিকশাচালক মো. নুরুল আবছারের সঙ্গে। এ চালক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ধাওয়া খেয়েছি। সেই থেকে মনে ভয় ধরে গেছে।’
তবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার প্রতিনিধিরা)