কুড়িগ্রামে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বিরুদ্ধে আশ্রয়ণের ঘর বিক্রির অভিযোগ

কুড়িগ্রামের সাহেবের আলগা ইউনিয়নের দইখাওয়ার চর আশ্রয়ণ প্রকল্পের একাংশ। সম্প্রতি তোলাছবি: প্রথম আলো

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মোজাফফর হোসেন ও কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত ২৮ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। উলিপুরের ইউএনও মো. আতাউর রহমান অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় সাহেবের আলগা ইউনিয়নের দইখাওয়ার চরে ভূমিহীন ও গৃহহীন ১৫০টি পরিবারের জন্য ৩০টি শেড নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি শেডে পাঁচটি করে ঘর রয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ১৫০টি পরিবারের জন্য ঘর বরাদ্দের কথা থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফফর হোসেন ও স্থানীয় ইউপি সদস্যরা ঘর দেওয়ার কথা বলে ২ শতাধিক অসহায় মানুষের কাছ থেকে পাঁচ হাজার করে টাকা নেন। প্রকল্পের ঘর নির্মাণের ২ বছর পেরিয়ে গেলেও তাঁরা এখনো ঘর বুঝে পাননি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সিরাজুদ্দৌলা জানান, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দইখাওয়ার চর আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাটি ভরাটের জন্য ১৫৮ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ওই প্রকল্পের বরাদ্দসহ অন্য কোনো তথ্য তাঁদের কাছে নেই। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রকল্প হওয়ায় তা সেনাবাহিনী বাস্তবায়ন করেছে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগস্ট মাসে বন্যায় পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নদে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। নদীভাঙনে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি হুমকির মুখে পড়ে। এখনো ব্রহ্মপুত্র নদের অদূরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কিছু ঘর কঙ্কালসার দাঁড়িয়ে আছে। প্রকল্পের ৩০টি শেডের ১৩টি শেডের ঘরগুলো ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। বাকি ১৭টি শেড ইতিমধ্যে ভেঙে গেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদীভাঙন শুরু হলে ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আহের আলী, ২ নম্বর ওয়ার্ডের শুকুর আলী, ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য ফুলবানু ও চেয়ারম্যান মিলে দুটি শেডের ১০টি ঘর কোনো ধরনের দরপত্র ও প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ২ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ঘরগুলো ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের ঝরু শেখ, মাঝের আলগার চরের আমীর হামজা কেনেন। এ ছাড়া ভাঙনের সুযোগে চেয়ারম্যান মোজাফফর হোসেন ৫টি ঘর তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান।

সরেজমিনে আমীর হামজার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয়ণের ঘরের টিন ও দরজা দেখা গেছে। আমীর হামজার ছেলে সুজন আলী প্রথম আলোকে বলেন, ২৪টি টিন, দুটি দরজা ও দুটি জানালা ইউপি সদস্য ফুলবানুর কাছ থেকে কেনা হয়েছে। তবে কত টাকায় কিনেছেন, সেটি তাঁর বাবা আমীর হামজা জানেন।

সাহেবের আলগা ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আহের আলী বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য করা ঘরগুলোর কিছু ঘর বিতরণের আগেই ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে গেছে। তাঁরা স্থানীয়দের সহায়তায় কিছু ঘর উদ্ধার করে পাশেই সংরক্ষণ করে রেখেছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ৫টি ঘর নিয়ে গেছেন। কোনো ঘর বিক্রি করা হয়নি। তবে কিছু ঘর হারিয়ে গেছে। টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘যারা অভিযোগ করেছে, তারা সবাই পাতলা মানুষ (অবুঝ)। আমরা কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি।’

ঘর বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোজাফফর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নদীভাঙনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো ভেঙে যাচ্ছিল। এলাকাবাসী ও ইউপি সদস্যরা ঘরগুলো ভেঙে নিরাপদ স্থানে রেখেছেন। কোনো ঘর বিক্রি হয়নি। আশ্রয়ণের ঘর বাড়িতে নেওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না। আমি কেন টেন্ডার ছাড়া ঘর বিক্রি করব? আমি কেন ঘর নিজের বাসায় নিয়ে আসব? তবে ইউপি সদস্যরা যদি কোনো ঘর বিক্রি করে থাকেন, সেই দায় আমার নয়।’ তিনি বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় ৩২টি টিউবওয়েল ছিল। একটিও পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া কিছু ঘর মিসিং। আমরা সেগুলোর খোঁজ চালাচ্ছি।’

জানতে চাইলে ইউএনও আতাউর রহমান বলেন, ‘এলাকাবাসী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভেঙে যাওয়া ও বিক্রির অভিযোগ তুলে একটি অভিযোগ করেছেন। প্রকল্পের ঘর টেন্ডার ছাড়া বিক্রির সুযোগ নেই। চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা সরেজমিনে ১৯ সেপ্টেম্বর তদন্ত করেছি। এ ছাড়া অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও অভিযোগকারীদের নিয়ে বসেছিলাম। আগামী রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’