নোয়াখালীতে ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি
আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে নোয়াখালীর মাইজদীতে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৭৭ মিলিমিটার। জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, এটি গত ২০ বছরের মধ্যে নোয়াখালীতে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালী জেলা শহরের বেশির ভাগ এলাকা ডুবে গেছে। সড়কেও উঠেছে পানি। এ ছাড়া প্লাবিত হয়েছে জেলার ৯টি উপজেলার বেশির ভাগ নিচু এলাকাও। এতে জেলার বাসিন্দারা ভোগান্তিতে রয়েছেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে নৌ যোগাযোগও ব্যাহত হচ্ছে।
দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের সড়ক, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের ভেতরে, জেলা জজ আদালত আঙিনা, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সমানের সড়ক, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ভবন, নোয়াখালী প্রেসক্লাব ভবনের নিচতলা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া জেলা শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিণারায়নপুর, কৃষ্ণরামপুর, মাস্টারপাড়া ও সোনাপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার প্রায় সব সড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। জলমগ্ন হয়েছে শহরের বেশির ভাগ বাসাবাড়ির আঙিনা। অনেক ঘরও প্লাবিত।
জেলার চৌমুহনী-মাইজদী-সোনাপুর চার লেন সড়কের টাউন হল মোড়, জামে মসজিদ মোড়সহ কয়েকটি অংশে পানি উঠেছে। সড়কের আশপাশের দোকানেও পানি ঢুকেছে। শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কের পাশের নালাগুলোতে পানি উপচে সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে নালার ময়লা পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। বেশির ভাগ পুকুর ও জলাশয়ও ডুবে গেছে। সরকারি মহিলা কলেজ, নোয়াখালী সরকারি কলেজ সড়কের কাশেম উকিলের বিল্ডিং নামক স্থান এবং সেন্ট্রাল রোডে অনেককে জাল ও রাক্সা (মাছ ধরার অস্ত্র) দিয়ে মাছ শিকার করতে দেখা যায়।
শহরের সার্কিট হাউসসংলগ্ন লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ কিসলু প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টির পানিতে তাঁদের বসতঘরেও পানি ঢুকেছে। আশপাশের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মানুষ পানিবন্দী। পানিনিষ্কাশনের নালাগুলো দিয়ে পানি নামছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এতে যত বৃষ্টি হচ্ছে, সমস্যাও তত বাড়ছে।
নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারসংলগ্ন ছাবিদ মিয়া সড়ক এলাকার গৃহিণী সানজিদা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, টানা বৃষ্টিতে বাড়ির উঠানে হাঁটুপানি। রান্নাঘরেও পানি। পানির কারণে দুপুরে রান্নাও করাও সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে দোকান থেকে খাবার কিনে এনে খেয়েছেন।
সকালে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নিকট অতীতে এত বৃষ্টি নোয়াখালীতে হয়নি। এ কারণে শহরের বেশির ভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, শহরের একাধিক খাল অবৈধ দখলের কারণে সরু হয়ে পড়েছে। তাই নালাগুলো দিয়ে পানি ধীরগতিতে নামছে।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা আজরুল ইসলাম বলেন, নোয়াখালীতে ২৪ ঘণ্টায় ২৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভারী বৃষ্টিপাতে তাঁদের কার্যালয় ও আশপাশের সড়কও প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরও দু-এক দিন হতে পারে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণে জলাবদ্ধতাসহ উদ্ভূত সমস্যা জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।