নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে জ্বালানি তেলের ড্রামবাহী ট্রলারে বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া লাশের ময়নাতদন্ত আজ বৃহস্পতিবার সম্পন্ন হয়েছে। তবে লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় এখনো একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
গতকাল বুধবার দুপুরে মেঘনা পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ফতুল্লা ডিপো–সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীতে ট্রলারে জ্বালানি তেলের ড্রামবাহী লোড শেষে বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় একজনের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় দগ্ধ স্টাফ কামালকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় বেঁচে যান ট্রলারের মাঝি বাকের এবং সাঁতরে বেঁচে যান অপর স্টাফ বাবুল মোল্লা। তবে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন একজন। ট্রলারটিতে ডিপো থেকে ৮৬ ড্রাম পেট্রল, ৬৮ ড্রাম ডিজেলসহ বিভিন্ন মালামাল লোড করা ছিল।
আজ দুপুরে লাশের ময়নাতদন্তকালে ট্রলারে থাকা নিখোঁজ স্টাফ খোকন হোসেন (৫০) ও মিস্ত্রি ফখরুদ্দিনের (৪০) স্বজনেরা নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। উদ্ধার হওয়া লাশটি খোকন ও ফখরুদ্দিনের পরিবার দাবি করলে এ নিয়ে দোটানার সৃষ্টি হয়।
খোকন ভোলার মনপুরা সাতকুচিয়া ইউনিয়নের আবদুল কাদেরের ছেলে এবং মিস্ত্রি ফখরুদ্দিন একই জেলা ও থানার মধ্য চর সোয়ানিয়া এলাকার নাসির পাটওয়ারীর ছেলে।
হাসপাতালের মর্গের সামনে লাশের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ট্রলারের স্টাফ খোকন হোসেনের ছোট বোন নাজমা আক্তারসহ স্বজনেরা। খোকনের সংসারে ৬৫ বছর বয়সী মা পারুল বেগম, স্ত্রী সুরমা আক্তার, ১০ বছর বয়সী খুকুমণি ও ৪ বছর বয়সী মেয়ে তুয়া রয়েছে। খুকুমণি মাদ্রাসায় নাজেরা বিভাগে পড়ে। দুই বছর ধরে খোকন ট্রলারে কাজ করতেন। তাঁর আয় দিয়েই তাঁদের পরিবার চলত। ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে তাঁর মা ভেঙে পড়েছেন।
খোকনের ভগ্নিপতি শামসুদ্দিন বলেন, মরদেহ পুড়ে গেছে, দুই পরিবার (খোকন ও ফখরুদ্দিন) মরদেহ তাদের বলে দাবি করেছে। ট্রলারের মাঝি বাকেরের তথ্য অনুযায়ী মরদেহটি তাঁর শ্যালক খোকনের। স্থানীয় চেয়ারম্যান দুই পরিবারকে মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে নিয়ে গিয়ে দাফন করতে বলেছেন। ডিএনএ পরীক্ষায় নমুনা যাঁর সঙ্গে মিলবে, লাশ তাঁদের হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
শামসুদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘ট্রলারের আগুনের ঘটনায় মালিকপক্ষের কেউ গত দুই দিনেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। খোকনের আয়ে সংসারটি চলত। এখন কীভাবে পরিবারটি চলবে, সেটি ভাবতে পারছি না। মালিকপক্ষ তাঁদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো আশ্বাসও দেয়নি।’
মিস্ত্রি ফখরুদ্দিনের বাবা নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী ও ছোট ভাই সবুজ পাটওয়ারী মরদেহের জন্য মর্গের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। ফখরুদ্দিনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ১২ বছর বয়সী মেয়ে ফাবিয়া মাদ্রাসায় নুরানীতে পড়ে এবং সাত বছর বয়সী ছেলে সাব্বিরও মাদ্রাসায় পড়ে।
সবুজ পাটওয়ারী বলেন, তাঁরা দরিদ্র পরিবারের। ট্রলারের মালিকপক্ষ তাঁদের ক্ষতিপূরণে কোনো আশ্বাস দেয়নি।
মরদেহ আগুনে পুড়ে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শেখ ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ডিএনএ নমুনা পরীক্ষা যাঁদের সঙ্গে মিলবে, লাশ তাঁদের হবে।
এদিকে আজ বুড়িগঙ্গা নদীতে নিখোঁজের তল্লাশি চালিয়েছেন পাগলা নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বিকেল পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত নিখোঁজের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের পাগলা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. কামাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, পুড়ে যাওয়া একজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তবে পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। অপর একজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজের খোঁজে নদীতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।