ক্ষমতা চলে গেলে পালাতে হয়, আমরা এমন রাজনীতি চাই না: হাসনাত আবদুল্লাহ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘যে রাজনীতিতে ক্ষমতা চলে গেলে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়, আমরা এমন রাজনীতি চাই না। আমরা চাই, যে রাজনীতিতে ক্ষমতা চলে গেলেও মানুষ আপনাকে সম্মান করবে। আমরা অতীতের মতো গুম, খুন, হত্যা, নিপীড়ন-নির্যাতন চাই না। আপনার সঙ্গে আমার মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রশ্নে, সমাজের ইতিবাচক প্রশ্নে, সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির প্রশ্নে আমরা এক এবং ঐক্যবদ্ধের সংহতির মাধ্যমে দেশকে পুনর্গঠন করতে চাই।’
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা সদরের একটি রেস্তোরাঁয় জাতীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যুগের পর যুগ ফ্যাসিবাদের শিকল থেকে মুক্ত হতে পারেনি বাংলাদেশ। চরম সত্য হলো, দেশটা ফ্যাসিবাদের আষ্টেপৃষ্ঠে শিকলে বাঁধা ছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিবাদের শিকলমুক্ত করেছে ভয়হীন তরুণ প্রজম্ম। যে প্রজন্মটাকে আমরা অলস ভাবতাম, মুঠোফোন নিয়ে পড়ে থাকত, ওই প্রজন্মই দিন শেষে আমাদের কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। আমরা অতীতের রাজনীতির পুনরাবৃত্তি চাই না। তাই বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক ধারা পরিবর্তন করতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘যেখানে মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার ছিল না, স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করার অধিকার ছিল না, ইমামেরা মসজিদে কোরআন যেভাবে বলেছে, সেভাবে খুতবা দেবে, তাতেও বাধা দেওয়া হয়েছে, সাংবাদিকেরা নিজেদের মতো করে পেশাদারত্ব পালন করবে, সেখানেও বাধা দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওই ফ্যাসিবাদী চক্র নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। তরুণ প্রজন্মই আমাদের এসবের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।’
নিজের উপজেলা দেবীদ্বারের মানুষের কল্যাণ চান উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘দেবীদ্বারে আর কোনো রাজনৈতিক সহিংসতা করতে দেওয়া হবে না। আপনি যে মতের বা পথেরই হোন না কেন, এতে কিচ্ছু আসে–যায় না। আমরা দেখব, আপনি দেশের কল্যাণ চান কি না, দেবীদ্বারের কল্যাণ চান কি না। যদি কল্যাণ চান, তাহলে আপনি আমাদের বন্ধু, আর যদি না চান, তাহলে আপনার সঙ্গে আমার মতপার্থক্য থাকবেই।’
নাগরিক কমিটির মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে মো. মজিবুর রহমান, সাইফুল ইসলাম শামীম, সাঈদ, নাহিদ হাছান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক সাকিব হোসাইন প্রমুখ বক্তব্য দেন। এর আগে সকালে শতবর্ষী দেবীদ্বার সরকারি রেয়াজ উদ্দিন পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আবদুস সবুর ও সহকারী শিক্ষক জামাল মোহাম্মদ কবিরকে দেওয়া এক বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হাসনাত আবদুল্লাহ বক্তব্য দেন।
সেখানে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, শিক্ষকতাকে অবশ্যই বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির একটা পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। যাতে যাঁরা বাংলাদেশের সর্বোত্তম মেধাবী, তাঁরা যেন এ পেশায় আসতে উৎসাহিত হন। শিক্ষকতা এমন একটি পেশা, যাঁরা শিক্ষার্থীদের তৈরি করেন। তাই শিক্ষকদের সর্বোচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের বিএনসিসি ও স্কাউট দলের সমন্বয়ে দুই শিক্ষককে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ফুলের শুভেচ্ছাসহ উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান শেষে ফুলে ফুলে সুসজ্জিত একটি গাড়িতে করে দুই শিক্ষককে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।