পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন কার্যালয়ের গাছ বিক্রির অভিযোগ

চর জব্বর ইউনিয়ন পরিষদের গাছ কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। গতকাল নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর জব্বর ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণেপ্রথম আলো

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও চর জব্বর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে পরিষদ কমপ্লেক্সের শতাধিক সরকারি গাছ গোপনে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার থেকে বিক্রি করা গাছ কাটা শুরু হয়। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে গাছ কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার সকালে একদল শ্রমিক উপজেলার কাঞ্চনবাজারের চর জব্বর ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের ভেতরের মেহগনি, কড়ইসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কাটা শুরু করেন। গতকাল রোববার দুপুর পর্যন্ত ছোট-বড় প্রায় ৬০টি গাছ কাটা হয়। এর মধ্যে ১৮টি গাছ বড়। বাকিগুলো ছোট গাছ। খবর পেয়ে দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান কাউছার আলম ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করে দেন।

ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান কাউছার আলম প্রথম আলোকে বলেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক পরিষদে আসছেন না। তাঁর মুঠোফোনটিও বন্ধ। ইতিপূর্বে পরিষদ কমপ্লেক্সের সীমানার ভেতর থাকা গাছ কাটার বিষয়ে কোনো ধরনের আলোচনা কিংবা সভা হয়নি। গতকাল দুপুরের দিকে তিনি পরিষদ কমপ্লেক্সের সামনে দিয়ে একটি সালিসে যাওয়ার পথে দেখেন অনেকগুলো গাছ কাটা অবস্থায় পড়ে আছে এবং আরও গাছ কাটা হচ্ছে। শ্রমিকেরা জানান, কাঞ্চনবাজারের গাছ ব্যবসায়ী জসিম তাঁদের নিয়োগ করেছেন। এরপর গাছ ব্যাপারী জসিমকে ফোন করলে তিনি জানান, চেয়ারম্যান তাঁকে গাছগুলো কাটতে বলেছেন। কিন্তু চেয়ারম্যান আত্মগোপনে, এমন অবস্থায় পরিষদের কাউকে না জানিয়ে গাছ কাটার কারণ জানতে চাইলে জসিম উদ্দিন কোনো জবাব দিতে পারেননি। তখন তিনি গাছ কাটা বন্ধ রাখতে বলেন।

এ বিষয়ে গাছ ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন আগে পরিষদের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের সুবিধার্থে চেয়ারম্যান তাঁর কাছে গাছগুলো বিক্রি করেছেন। তিনি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে ১৬টি গাছ কিনেছেন। এরই মধ্যে চেয়ারম্যান ওমর ফারুককে তিনি ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। বাকি টাকা পরে দেবেন। তবে চেয়ারম্যান গাছ বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়ে তাঁর পরিষদে কারও সঙ্গে কথা বলেছেন কি না, তা তিনি জানেন না। গতকাল দুপুরে প্যানেল চেয়ারম্যান তাঁকে ফোন করে গাছ কাটা বন্ধ রাখতে বলেছেন। একই কথা বলেছেন উপজেলা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তাও।

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল আমিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, চেয়ারম্যান চাইলেই ইউনিয়ন পরিষদের গাছ বিক্রি করতে পারবেন না। গাছ কাটতে হলে তাঁকে উপজেলা বন কমিটির কাছে আবেদন করতে হবে। কমিটি থেকে ওই প্রস্তাব জেলা বন কমিটির কাছে যাবে। সেখানে অনুমোদন পেলেই কেবল গাছ কাটতে পারবেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এ রকম কিছুই হয়নি। তাই ঘটনাটি তিনি জানার পর সংশ্লিষ্ট সচিবকে ফোন করে এ বিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।