বাঘায় আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ২৪ ঘণ্টা পর এক পক্ষের মামলা
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ২৪ ঘণ্টা পর মামলা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহিনুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলা করেছেন। তিনি দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহরিয়ার আলমের অনুসারী।
মামলায় বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলী, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মোকাদ্দেসসহ ৪৬ জনের নাম উল্লেখ ও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলা হওয়ার আগেই শনিবার রাত পর্যন্ত সাতজনকে আটক করে পুলিশ। তাঁরা সবাই পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সমর্থক। মামলায় আজ গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাকুড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম (৩৪), জেলা ছাত্রলীগের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক মো. মারুফ হাসান (৩২), চক ছাতারী গ্রামের মৃত সোবহান মণ্ডলের ছেলে মো. গোলাম মোস্তফা (৩৮), বানিয়াপাড়া গ্রামের মো. শফিকুল ইসলামের ছেলে মো. মতিউর রহমান (৩০), উত্তর মিলিক বাঘা গ্রামের মো. আসমত আলীর ছেলে মো. নাসির ইসলাম (২৮), জেলা যুবলীগের সাবেক সহসম্পাদক মো. শাহজামাল সরকার, উত্তর মিলিক বাঘার তসিকুলের ছেলে মো. তরঙ্গকে (২৩)।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ১০টার দিকে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের ডাকে উপজেলা পরিষদের সামনে পৌরসভার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন চলছিল। এ সময় আসামিরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। সেখানে কয়েকটি পিস্তলের গুলিবর্ষণ করা হয়। আতঙ্কে তাঁরা মানববন্ধন ছেড়ে উপজেলা চত্বরের ভেতরে পালাতে গেলে আসামিরা এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল ও পাথর ছোড়েন। এ অবস্থায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম উপজেলা অডিটরিয়ামের সামনে পড়ে গেলে তাঁকে চায়নিজ কুড়াল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথার বাঁ পাশে আঘাত করেন আক্কাছ আলী। ২ নম্বর আসামি মেরাজুল ইসলাম তাঁর হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আশরাফুল ইসলামের ঘাড়ে আঘাত করেন। আসামিদের ইটপাটকেল ও পাথরের আঘাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের গ্লাস ও কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করায় আনুমানিক ৪০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। আহত আশরাফুল ইসলাম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।
মামলার বাদী মো. শাহিনুর রহমান বলেন, ‘সবার সঙ্গে কথা বলে আমি আজ দুপুরে মামলা করেছি।’
বাঘা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, দুপুরে মামলা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে উপজেলা চত্বরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের মানববন্ধনের আয়োজক ছিল বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগ। পক্ষটির কর্মসূচি ছিল পৌর মেয়র আক্কাছ আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে। এই পক্ষটি সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
অপর পক্ষ বাঘা উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক সমিতির নামে ক্রেতার কাছ থেকে জোরপূর্বক অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। তাদের ব্যানারে আয়োজক হিসেবে লেখা ছিল বাঘা উপজেলা সচেতন নাগরিকবৃন্দ। এই পক্ষ সংসদ সদস্যের গঠিত কমিটিকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল। এতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন বাঘা পৌরসভা মেয়র আক্কাছ আলী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লায়েব উদ্দিন (লাভলু), পাকুড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, শনিবার প্রায় পৌনে ১ ঘণ্টার মতো দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল বোঝাই বাজার ব্যাগ, চাপাতি, পাইপ, চায়নিজ কুড়াল দেখা গেছে। দুই পক্ষের অনেকের মাথায় হেলমেটও ছিল। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও লাঠিপেটাও করেছে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সংঘর্ষের সূত্রপাত ১০ জুন। সেদিন বাঘা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক সমিতির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে ২০ জুন উপজেলার সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করে উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র পক্ষ। এতে বাঘার দলিল লেখকসহ হয়রানির শিকার ব্যক্তিরা অংশ নেন।