পাংশায় ঋণ দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে উধাও সমবায় সমিতি
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় সহজ শর্তে ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকের টাকা নিয়ে একটি সমবায় সমিতি উধাও হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই সমবায় সমিতির নাম সন্ধানী শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড।
কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা শহরের আজিজ সরদার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাগদুলি সড়কে মোমিন মণ্ডল নামের এক ব্যক্তির বাড়ির দ্বিতীয় তলায় সপ্তাহ দুই আগে ওই সমবায় সমিতির কার্যক্রম শুরু করে। সমিতির সদস্যরা পাংশা ও কালুখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহক সংগ্রহ শুরু করেন। তাঁরা গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা গ্রহণ করেন। কথা ছিল, ২২ জুন গ্রাহকদের ঋণ দেওয়া হবে। ঋণ নিতে এসে গ্রাহকেরা দেখতে পান, সমবায় সমিতির কার্যালয় তালাবদ্ধ। কয়েকজন বলেন, অন্তত ১০ লাখ টাকা নিয়ে সমিতির কর্মকর্তারা পালিয়ে গেছেন।
পাংশা উপজেলা শহরের মৈশালা এলাকার বাসিন্দা ভ্যানচালক হেলাল সরদার বলেন, ‘আমি দরিদ্র মানুষ। আমাদের অল্প সুদে দুই লাখ টাকা লোন দিতে চেয়েছিল। আমি সাড়ে চার হাজার টাকা জমা দিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার আমার লোন পাওয়ার কথা ছিল। সকালে বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে অফিসে এসেছি। এসে দেখি, আমার মতো অনেকেই এখানে উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু যাঁরা ঋণ দেবেন, তাঁরা কেউ নেই। এখন বুঝতে পারছি, আমরা প্রতারণার শিকার হয়েছি।’
কালুখালী উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা হাজেরা খাতুন বলেন, ‘আমাকে দুই লাখ টাকা ঋণ দিতে চেয়েছিল। আমি ধারদেনা করে ২০ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলাম। আজ ঋণ নিয়ে ধারের টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু এসে দেখি অন্য ঘটনা। আমাদের টাকা নিয়ে সবাই পালিয়ে গেছে।’
গৌরাঙ্গপুরের ভ্যানচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই সমিতি আমাকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ দিতে চেয়েছিল। আমি তাদের কথায় বিশ্বাস করে আরেক সমিতি থেকে ঋণ করে ১৫ হাজার টাকা জমা দিই। আজ ঋণ পাওয়ার কথা ছিল। সকালে আসতে বলেছিল। কিন্তু এসে জানতে পারি, অফিসের সবাই পালিয়ে গেছে।’
ঋণের বইয়ে আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যক্তি মাঠ কর্মকর্তা হিসেবে সই করেছেন। সেখানে তাঁর একটি মুঠোফোন নম্বরও দেওয়া আছে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
পাংশা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলায় ওই নামে কোনো নিবন্ধিত সমবায় সমিতি নেই। বিষয়টি জানার পর সেখানে গিয়েছিলাম। একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। বাড়িতে প্রতিষ্ঠানটির কোনো সাইনবোর্ড নেই। কাউকে সেখানে পাইনি। বাড়ির অপর এক ভাড়াটে আমার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি। আর ঠিক কত টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে, তা–ও এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।’
মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন করার আগে একটু খোঁজ নিলে খুব ভালো হয়। তাহলে আর কাউকে প্রতারণার শিকার হতে হবে না। বিষয়টি ইউএনওসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ভুক্তভোগীরা চাইলে তাঁদের আইনগত সহায়তা দেওয়া হবে। আমরা তাঁদের পাশে থাকব।’