রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসার প্রধানসহ ১০ জন নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসার প্রধান আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্বার জুনুনীসহ ছয় জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণেছবি: প্রথম আলো

নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করতে গোপন বৈঠকের সময় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহে পৃথক অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ বা আরসা) ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। তাঁদের মধ্যে ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পৃথক দুই মামলায় পাঁচ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্বার জুনুনী (৪৮), মোস্তাক আহাম্মদ (৬৬), সলিমুল্লাহ (২৭), ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার চর আলগী এলাকার আতিকুল ইসলামের ছেলে মনিরুজ্জামান (২৪), আসমত উল্লাহ (৪০) ও মো. হাসান (৪৩), সলিমুল্লাহর স্ত্রী আসমাউল হোসনা (২৩) ও আরাকান রাজ্যের ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর, মোসাম্মত শাহিনা (২২) ও ১৭ বছর বয়সী কিশোরী। তাঁদের মধ্যে মনিরুজ্জামান সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমি পল্লী এলাকায় ভাড়া থাকতেন। আর সলিমুল্লাহ, মোসাম্মত শাহিনা ও ১৭ বছর বয়সী কিশোরী কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকতেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্বার জুনুনী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির প্রধান বলে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। আতাউল্লাহ আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে খুনের নির্দেশদাতা ছিলেন বলে আদালতের জবানবন্দিতে জানিয়েছেন এই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামি। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানে ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা (স্কোয়াড্রন লিডার) রিজওয়ান রুশদী হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি আরসার প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ।

আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঈনুদ্দিন কাদিরের আদালতে আসামিদের হাজির করে দুই মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গ্রেপ্তার বাকি চারজন নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করা হয়নি।

এর আগে গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে গোপন বৈঠক করার সময় সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমি পল্লী আবাসিক এলাকা থেকে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির ছয়জন এবং ময়মনসিংহ থেকে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১১। তাঁদের কাছ থেকে নগদ ২১ লাখ ৩৯ হাজার ১০০ টাকা, একটি চাকু, ধারালো স্টিলের মোটা চেইন ও চারটি হাতঘড়ি জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে র‍্যাবের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়।

আরও পড়ুন

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি খোরশেদ আলম মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, গোপন বৈঠক করার সময় র‍্যাব অভিযান চালিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ছয়জন এবং ময়মনসিংহ থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আসামিদের কাছ থেকে ২১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সংঘবদ্ধভাবে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গুপ্তচরের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে ষড়যন্ত্র করার জন্য অশুভ পাঁয়তারার চেষ্টাকালে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

খোরশেদ আলম মোল্লা বলেন, তাঁরা অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। তাদের পাসপোর্ট বা কোনো ভিসা নেই। অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকে অপকর্ম করতে পারে, তাঁরা কোন উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করল, তাঁদের অশুভ পরিকল্পনা জানতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত ছয় আসামিকে পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৬ মার্চ দিবাগত রাত ১০টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসিক এলাকায় ও ময়মনসিংহ সদর থানার নতুন বাজার মোড় এলাকার গার্ডেন সিটিতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির কতিপয় সদস্য নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও অপরাধ সংঘটনের লক্ষ্যে গোপন বৈঠক করছে—এমন সংবাদের ভিত্তিতে নারী-শিশুসহ ওই ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগেও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও গুরুতর অপরাধ সংঘটনের লক্ষ্যে গোপন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় তাঁরা ওই বৈঠক করছিলেন। পরে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান প্রথম আলোকে বলেন, ওই ১০ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইন ও ফরেন অ্যাক্ট আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। তাঁদের আগমন ও অবস্থান সম্পর্কে জানতে ছয়জনকে পৃথক দুটি মামলায় পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আরও পড়ুন