ধর্মপাশায় ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে ধীরগতি, শঙ্কায় কৃষক

  • ৮৬টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। 

  • বাঁধের কাজ ধীর গতির কারণে বোরো ধান রক্ষা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকেরা। 

ঢিমেতালে চলছে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ। গতকাল ধর্মপাশা উপজেলার সোনামড়ল হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের ৩৩ নম্বর প্রকল্পেছবি: প্রথম আলো

হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করার নির্ধারিত সময়ের এক মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার ৭টি হাওরের ৮৬টি ফসল রক্ষা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসির) সদস্যরা এখনো প্রথম কিস্তির টাকা পাচ্ছেন না। ফলে বাঁধের কাজ চলছে ধীরগতিতে। এ অবস্থায় হাওরের বোরো ধান রক্ষা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকেরা। 

ধর্মপাশা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল, জয়ধনা, সোনামড়ল কাইলানী, জয়ধনা, গুরমা ও রুই বিল হাওর সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন। এই ৭টি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের ৮৬টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। 

সাতটি হাওরের ৮৬টি ফসল রক্ষা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যরা এখনো প্রথম কিস্তির টাকা পাননি।

নীতিমালা অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও মেরামতকাজ শুরু করে তা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাঁধের কাজের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু হাওর থেকে পানি নামতে দেরি হওয়ায় পুরোদমে সব কটি বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। চারটি কিস্তিতে চেকের মাধ্যমে বাঁধের কাজের বরাদ্দের টাকা পিআইসিদের দেওয়ার কথা রয়েছে। কাজ শুরুর আগেই পিআইসিদের বরাদ্দের ২৫ শতাংশ টাকার অগ্রিম চেক দেওয়ার কথা। কিন্তু এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পিআইসিরা প্রথম কিস্তির টাকা পাননি। 

হাওরপারের কয়েকজন কৃষক বলেন, পিআইসি গঠনসহ অন্যান্য কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় এমনিতেই বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে দেরিতে। কাজ চলছে ধীরগতিতে। এতে বোরো ফসল ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। 

গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত সরেজমিনে উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল ও রুই বিল হাওরের অন্তত ১০টি ফসল রক্ষা বাঁধের প্রকল্প কাজ ঘুরে দেখা গেছে, বাঁধের প্রকল্প কাজগুলো চলছে ধীরগতিতে। বাঁধে যেততেনভাবে মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পে পাঁচ থেকে সাতজন করে শ্রমিক কাজ করছেন। 

উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওরের ৩৩ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি কৃষক সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের বাঁধটির দৈর্ঘ্য ৯৯০ মিটার। বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫ টাকা। যথাসময়ে আমরা বাঁধের কাজ শুরু করেছি। নিয়ম অনুযায়ী, প্রকল্পের কাজ শুরু করার আগেই প্রথম কিস্তি বাবদ বরাদ্দের ২৫ শতাংশ টাকার চেক পাওয়ার কথা ছিল। এখনো এ বাবদ একটি টাকাও পাইনি। ধারদেনা করে কাজ করতে গিয়ে খুবই সমস্যা হচ্ছে। এতে বাঁধের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুনেছি, ইউএনও স্যার না থাকায় প্রথম কিস্তির চেক দিতে দেরি হচ্ছে। দ্রুত প্রথম কিস্তির টাকার চেক প্রদানের জোর দাবি জানাচ্ছি।’ 

হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের তদারকির দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম জানান, বাঁধের কাজের প্রথম কিস্তির টাকা ইতিমধ্যে ব্যাংকে এসে জমা হয়েছে। পিআইসিরা টাকা না পাওয়ায় বাঁধের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। 

প্রকল্পের কাজ শুরু করার আগেই প্রথম কিস্তি বাবদ বরাদ্দের ২৫ শতাংশ টাকার চেক পাওয়ার কথা ছিল। এখনো এ বাবদ একটি টাকাও পাইনি।
সালাহ উদ্দিন, একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি

পিআইসি সভাপতিদের এখনো প্রথম কিস্তির টাকা না দেওয়ার বিষয়টি নজরে আনা হলে ধর্মপাশার ভারপ্রাপ্ত ইউএনওর দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অলিদুজ্জামান বলেন, ‘ধর্মপাশার ইউএনও স্যার গত ৩১ ডিসেম্বর বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এ উপজেলায় নতুন ইউএনও পদায়ন হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই এ সমস্যার সমাধান হবে।’ 

বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া গতকাল দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, ‘ধর্মপাশায় নতুন ইউএনও দেওয়া হয়েছে। দুই–তিন দিনের মধ্যে পিআইসিরা প্রথম কিস্তির টাকার চেক পেয়ে যাবেন বলে আশা করছি।’