ফরিদপুরেও বিএনপির গণসমাবেশের আগে ‘সোচ্চার’ পরিবহন নেতারা, ৩৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের হুমকি

ফরিদপুর বাস টার্মিনাল
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

এবার ফরিদপুরে বিএনপির গণসমাবেশের আগে এসে মহাসড়কে তিন চাকার যান বন্ধের দাবিতে ‘সোচ্চার’ হয়েছে জেলা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। বিভাগীয় কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়ে সংগঠনটির নেতারা বলছেন, ১০ নভেম্বরের মধ্যে দাবি মানা না হলে পরদিন সকাল ৬টা থেকে ১২ নভেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত (৩৮ ঘণ্টা) সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রাখা হবে।

পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী, ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দলের নেতারা বলছেন, তাঁরা আগেই জানতেন, গণসমাবেশে নেতা–কর্মীদের আসা ঠেকাতে বাস বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাঁরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পরিবহন নেতারা বলছেন, ধর্মঘটের সঙ্গে বিএনপির গণসমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই।

আরও পড়ুন

এর আগে খুলনা, রংপুর ও বরিশালে অনুষ্ঠিত বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন ও সমাবেশের দিন পরিবহন ধর্মঘট পালন করেন স্থানীয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকনেতারা। তাঁদেরও দাবি ছিল, মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ করা। যদিও বিএনপির সমাবেশের পর তাঁদের সেই দাবি নিয়ে আর কোনো কর্মসূচির কথা শোনা যায়নি।

মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়ে আজ সোমবার দুপুরে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের হাতে চিঠি তুলে দেন জেলা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর এই চিঠি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নাসির স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের  ২০২০ সালের ২৯ মের সভার ১৩ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ২২টি জাতীয় মহাসড়কে সব ধরনের অবৈধ থ্রি–হুইলার (নছিমন, করিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল) চলাচল বন্ধের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এরপরও এসব অবৈধ যান মহাসড়কে অবাধে চলাচল করছে। যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দক্ষিণবঙ্গের আঞ্চলিক ও দূরপাল্লায় পরিবহন চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে। মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের অনাকঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটছে। এমতাবস্থায় যাত্রীদের নির্বিঘ্নে ও নিরাপদ যাতায়তের জন্য ১০ নভেম্বরের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ জানানো হচ্ছে। না হলে ১১ নভেম্বর (শুক্রবার) সকাল ৬টা থেকে ১২ নভেম্বর শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ফরিদপুর জেলা বাস টার্মিনাল থেকে আঞ্চলিক বাস ও মিনিবাসসহ দূরপাল্লার পরিবহনের সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ রাখা হবে।

ফরিদপুরে বিএনপির গণসমাবেশ উপলক্ষে শহরের বিভিন্নস্থানে ব্যানার–ফেস্টুন টানিয়েছেন নেতা–কর্মীরা
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির সমাবেশের আগে এসে অবৈধ যান নিয়ে সোচ্চার হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি জোবায়ের জাকির প্রথম আলোকে বলেন, তিন–চার মাস ধরে তাঁরা মহাসড়কে থ্রি–হুইলার বন্ধের জন্য বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। সম্প্রতি এ নিয়ে মাদারীপুরেও সভা হয়েছে। সেখানেই ১০ নভেম্বরের মধ্যে দাবি মানা না হলে ১১ নভেম্বর থেকে দুই দিনের ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়। এরপরও দাবি মানা না হলে অনির্দিষ্টিকালের জন্য ধর্মঘটে যাবেন তাঁরা। তিনি বলেন, বিএনপির গণসমাবেশের সঙ্গে তাঁদের কর্মসূচির সম্পর্ক নেই। তবে কাকতালীয়ভাবে বিষয়টি মিলে গেছে।

ফরিদপুর মাহেন্দ্র শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম বলেন, তাঁরা মহাসড়কের সব অংশে মাহেন্দ্র চালান না। ফিডার রোডে ঢোকার জন্য যতটুকু ব্যবহার করতে হয়, ততটুকু করেন। বাসওয়ালারা কেন এসব দাবি করেন, তার মানে বোঝেন না। তাঁরা গরিব মানুষ। তিনি বলেন, ‘আমরা গাড়ি চালাব। আমরা রাজনীতি বুঝি না, আমরা বাঁইচা থাকার রাজনীতি করি।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

ট্রলারে চড়ে, ভেলায় চড়ে এমনকি হেঁটে নেতা–কর্মীরা সমাবেশে আসবেন বলে জানান বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) এবং ফরিদপুরে গণসমাবেশের সমন্বয়কারী শামা ওবায়েদ। তিনি বলেন, ‘পরিবহন ধর্মঘট সরাসরি ডাকুক কিংবা পরোক্ষভাবে ডাকুক, গত পাঁচটি সমাবেশের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, আমাদের সমাবেশের আগে ও সমাবেশের দিন তারা বাস বন্ধ করে দেবে। সব জায়গায় তা করেছে। জনগণের ভোগান্তি তাদের মাথায় নেই, তাদের চিন্তা বিএনপিকে বিপাকে ফেলানো। কিন্তু এতে কোন কাজ হবে না। মানুষের আবেগ আটকে রাখা যায় না।’

আরও পড়ুন