পদ্মা সেতুতে দেশের প্রথম পাথরবিহীন রেলপথ, দ্রুতগতির সঙ্গে ভ্রমণ হবে আরামদায়ক
পদ্মা সেতুতে দেশের প্রথম পাথরবিহীন রেলপথ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। চলতি মাসেই পদ্মা সেতু ও সেতুকে সড়কের সঙ্গে সংযোগ করা দুই প্রান্তের ভায়াডাক্টে ১৩ দশমিক ৩ কিলোমিটার এই পথে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানো হবে। সাধারণ রেলপথের চেয়ে পাথরবিহীন এই রেলপথে ভ্রমণ আরামদায়ক হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু রেল–সংযোগ প্রকল্পের আওতায় রেললিংক প্রকল্পের অধীন ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনটি ভাগে এই নির্মাণকাজ চলছে। এগুলো হচ্ছে—ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা থেকে যশোর।
মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা অংশে রয়েছে পদ্মা সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজ প্রায় শেষ। এখন সেতুর মাঝ বরাবরে ৫০০ মিটার রেললাইন নির্মাণকাজ চলছে। সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার, সেতু থেকে জাজিরার পদ্মা স্টেশন পর্যন্ত ভায়াডাক্ট ৪ কিলোমিটার ও সেতু হতে মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৫ কিলোমিটার রেলপথ হচ্ছে পাথরবিহীন।
পদ্মা সেতুর রেললিংক প্রকল্পের পরিদর্শন প্রকৌশলী সঞ্জয় চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে প্রথম নতুন প্রযুক্তির পাথরবিহীন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মা সেতুতে। পাথরবিহীন রেলপথে ভ্রমণ হয় আরামদায়ক। সেতুতে যাতে কোনো ঝাঁকুনি (জার্কিং) না হয়, তার জন্য পাথরবিহীন রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, সেতুর স্প্যানের ওপর লোহার খাঁচা বানানো হয়েছে। তার ওপর রেলট্র্যাক স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি রেলট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ২৫ মিটার। তাতে ৪২টি স্লিপার রয়েছে। রেলট্র্যাক ও স্লিপার কংক্রিট দিয়ে ঢালাই করে আটকে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ রেললাইন যেভাবে পাথরের ওপর বসানো হয়, পদ্মা সেতুর ওই ১৩ দশমিক ৩ কিলোমিটার রেললাইন সেভাবে নির্মাণ করা হয়নি।
পদ্মা সেতুর রেললিংক প্রকল্পের পাথরবিহীন রেলপথের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী জহিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এখনো বাংলাদেশে পাথরবিহীন রেলপথ নেই। এটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। নির্মাণ করার সময় ব্যয় বেশি হলেও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় নেই। এ রেললাইনে কোনো ঝাঁকুনি হয় না। পদ্মা সেতুর জন্য ঝাঁকুনিবিহীন রেললাইন প্রয়োজন।
এই রেলপথে দ্রুতগতিতে ট্রেন চালানো যাবে উল্লেখ করে প্রকৌশলী জহিরুল হক বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পাথরবিহীন রেলপথ দিয়ে ঘণ্টায় ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলতে পারে। পদ্মা সেতুতে এর গতি নির্ধারণ করা হয়েছে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। ১৩ দশমিক ৩ কিলোমিটার পাথরবিহীন রেলপথের মধ্যে সেতুতে ৫০০ মিটারের কাজ বাকি আছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তা শেষ করা হবে। মার্চের মধ্যে সেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে রেল চালানো হবে বলে তিনি আশা করছেন।