কুমিল্লায় গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে, হাসপাতালে রোগীর চাপ
কুমিল্লায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অনেকে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে সবার বাসাবাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় মশারি টাঙাতে হবে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ভেতরে ডেঙ্গু কর্নার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সেখানে গিয়ে জানা যায়, ২৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন, যাঁদের বেশির ভাগই স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। কয়েকজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকায়। হাসপাতালের ডেঙ্গু কর্নারে একজন রোগীকেও মশারি টাঙিয়ে থাকতে দেখা যায়নি। আবার শয্যাসংকটে অনেকে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বড় গোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দা শংকর সূত্রধর বলেন, ‘গত সোমবার ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। আমি এলাকার বাইরে কোথাও যাইনি, স্থানীয়ভাবেই আক্রান্ত হয়েছি। এখানে চিকিৎসা চলছে মোটামুটি। আর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বিভিন্ন সমস্যা তো থাকবেই।’
দেলোয়ার হোসেন নামের দেবীদ্বার উপজেলার রাজামেহার এলাকার এক যুবকও সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, অনেক সংকট আছে। এরপরও সঠিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছেন গত মঙ্গলবার।
বুড়িচং উপজেলার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব মোশারফ হোসেন বলেন, তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে চাকরি করেন। সেখানেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় পরিবারের লোকজন এখানে নিয়ে এসেছেন।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক মো. শাহজাহান বলেন, তাঁদের হাসপাতালে এমনিতেই শয্যাসংকট, এরপরও ছয়টি শয্যা নিয়ে ডেঙ্গু কর্নার করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীদের চাপ বাড়ছে, যার কারণে মেডিসিন বিভাগে অন্যান্য রোগীদের সঙ্গেও তাঁদের চিকিৎসা চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হওয়া ৫ জনসহ মোট ২৯ জন রোগী এখানে ভর্তি আছেন। প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে।
মো. শাহজাহান আরও বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে আসা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগ কুমিল্লা জেলাতেই আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে, মানুষকে আক্রান্ত করছে। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। কোথাও যেন এডিস মশার বংশবিস্তার না হয়, সে জন্য যা যা করণীয়, সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে তা করতে হবে। মানুষ সচেতন হলেই ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যাবে। হাসপাতালেও রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সতর্কতা বাড়ানো হবে।
জেলা সিভিল সার্জন নাসিমা আক্তার বলেন, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৪৮ জন রোগী ভর্তি আছেন। রোগীদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। সবাই যেন সঠিক চিকিৎসা পান, সে বিষয়ে সতর্ক আছেন। পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলাতেই ডেঙ্গু বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।