পাবনার বেড়া উপজেলা থেকে উদ্ধার হওয়া ‘কঙ্কাল’ নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী ও পরিবারের লোকজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কঙ্কালটি জিয়াউর রহমানের কি না, তা জানতে কঙ্কাল থেকে ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। জিয়াউরের পরিবার এ ঘটনায় মামলা করতে চাইলেও পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। পুলিশ বলছে, ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত মামলার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
তবে কঙ্কালটির ময়নাতদন্ত শেষে ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার পর তা জিয়াউরের পরিবারের কাছে গত বৃহস্পতিবার হস্তান্তর করা হয়। ওই দিনই স্বজনেরা স্থানীয় কবরস্থানে জিয়াউরের কঙ্কাল হিসেবে সেটিকে দাফন করেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, জিয়াউর রহমান ঢালারচর ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ২১ সেপ্টেম্বর জুয়ার আসর থেকে তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ। ২৭ সেপ্টেম্বর জুয়ার আসরের কাছেই পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় একটি কঙ্কাল পাওয়া যায়। কাপড় দেখে কঙ্কালটি জিয়াউরের বলে দাবি করেন তাঁর স্বজনেরা।
জিয়াউরের চাচা আজম কাজী বলেন, ‘মাত্র ছয় দিনে মানুষ কীভাবে কঙ্কাল হয়, তা নিয়ে আমাদেরও প্রশ্ন আছে। তবে কঙ্কালের পাশে পরনের লুঙ্গি ও গেঞ্জি দেখে আমরা নিশ্চিত ওটা জিয়াউরের। উদ্ধার করা গেঞ্জির পকেটে ১৯ হাজার ১০০ টাকাও পেয়েছি। জিয়াউর বলে নিশ্চিত হয়েই কঙ্কালটিকে আমরা দাফন করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেড়া থানায় মামলার জন্য যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু আমাদের ডিএনএ রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। কঙ্কাল থেকে নমুনা রাখা হয়েছে। এখন জিয়াউরের সন্তান অথবা ভাইকে নমুনা দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই আমরা ওদের নিয়ে গিয়ে নমুনা দিয়ে আসব।’
জিয়াউরের চাচা আজম কাজী ও স্ত্রী রহিমা খাতুন বলেন, কিছুদিন আগে জিয়াউর তাঁর একটি পুরোনো খননযন্ত্র (ভেকু) বিক্রি করেন। বিক্রির টাকা থেকে আট-নয় লাখ টাকা নিয়ে তিনি ২১ সেপ্টেম্বর সকালে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর যমুনার চরে অবস্থিত চরসাফুল্লাপুর গ্রামের জয়বাংলা বাজারের কাছে জুয়ার আসরে যান। ওই দিন বিকেল চারটার দিকে বেড়া থানার পুলিশ ধাওয়া দিলে জিয়াউরসহ জুয়াড়িরা ছোটাছুটি করে পালিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে কেউ গ্রামের দিকে যান, আবার কেউ খালে ঝাঁপ দেন। জিয়াউর গ্রামের দিকে চলে গিয়েছিলেন। পরে পুলিশ চলে গেলে অন্য জুয়াড়িরা গ্রাম থেকে বের হয়ে এলেও জিয়াউর আর ফেরেননি। ২৩ সেপ্টেম্বর তাঁর ভাই আজাদ কাজী আমিনপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
স্বজনেরা বলেন, ওই স্থানে দীর্ঘদিন ধরে জুয়ার আসর বসছিল। জুয়ার নেশার কারণে অনেক পরিবার পথে বসে গেছে। টাকার জন্যই জুয়ার আয়োজকেরা গ্রামের কোনো গোপন জায়গায় জিয়াউরকে নিয়ে হত্যা করে।
বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাদিউল ইসলাম বলেন, কঙ্কালটি জিয়াউরের কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষার বিকল্প নেই। তাই ডিএনএ প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত আপাতত মামলা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে এ ব্যাপারে তদন্ত অব্যাহত আছে। ওই এলাকাসহ তাঁর থানার আওতাধীন এলাকায় জুয়া বন্ধের জন্য পুলিশ কঠোরভাবে কাজ করছে।