জকিগঞ্জে ‘যৌতুক না দেওয়ায়’ গৃহবধূকে নির্যাতনের পর চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় যৌতুক না দেওয়ায় এক গৃহবধূকে নির্যাতনের পর চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় হওয়া একটি মামলার পর ওই নারীর স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে নির্যাতনের পর শুক্রবার এ ঘটনায় মামলা হয়েছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাস ছয়েক আগে উপজেলার বারঠাকুরী ইউনিয়নের উত্তরবাগ গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে আলকাছ উদ্দিনের (৩২) সঙ্গে পারিবারিকভাবে ওই নারীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি করে আসছিলেন আলকাছ। যৌতুকের টাকা না পেয়ে মাঝেমধ্যে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন তিনি। এই নিয়ে তাঁদের দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকত। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আলকাছ তাঁর স্ত্রীর কাছে যৌতুকের টাকা চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় আলকাছ উদ্দিন স্ত্রীর চুল ধরে মাটিতে ফেলে বাঁশের লাঠি দিয়ে মারতে থাকেন। এতে ওই নারী চিৎকার করে কান্নাকাটি করলে আলকাছের বড় ভাই কাঁচি নিয়ে আসেন। এরপর ওই নারীর চুল কেটে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তিনি পালিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে যান। সেখানকার এক ব্যক্তি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেন। পাশাপাশি বিষয়টি ওই নারীর পরিবারকেও জানান। খবর পেয়ে জকিগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে তাঁর মায়ের জিম্মায় জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
ভুক্তভোগী নারীর মা প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েকে শনিবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। চিকিৎসক ওষুধ লিখে দিয়েছেন।
এ ঘটনায় গত শুক্রবার ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে জকিগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আলকাছ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে।
ভুক্তভোগী নারী প্রথম আলোকে বলেন, আলকাছ উদ্দিন ধান ভাঙার যন্ত্র নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান থেকে চাল বের করার কাজ করেন। তিনি তাঁকে দুই লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। ‘মা গরিব মানুষ, এত টাকা কোথায় পাবেন,’ এমন উত্তর দিলে স্বামী তাঁকে বলেন, ‘মা চাকরি করে, তাঁর কাছ থেকে টাকা এনে দে।’ তিনি বলেন, মা স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় আয়ার কাজ করেন। সে টাকায় সংসার চলে। সেখান থেকে দুই লাখ টাকা আনা সম্ভব ছিল না। নির্যাতনের ঘটনায় তিনি তাঁর স্বামীর বিচার দাবি করেন।
সিলেট জেলা পুলিশের পরিদর্শক শ্যামল বণিক জানান, গ্রেপ্তার আলকাছ উদ্দিনকে গতকাল শনিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আলকাছ উদ্দিন কারাগারে থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি। তাঁর বাবা জাকির হোসেন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তিনি বৃদ্ধ মানুষ। মামলায় ছেলে আলকাছ ছাড়াও যে আরেক ছেলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। এ সময় তিনি বেশি কথা বলতে পারছিলেন না। ঘরে তাঁর ছেলে-মেয়ে কেউ নেই বলে জানান।