শাকসবজিতে ছেয়ে গেছে কুমিল্লার গোমতীর চর
কুমিল্লার গোমতী নদীর চরে বছরের ১২ মাসই শাকসবজি উৎপাদন করেন কৃষকেরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব শাকসবজি দেশের বিভিন্ন এলাকায়ও যেত। অন্যান্য বছর এ সময় আগাম শীতকালীন শাকসবজিতে ভরে থাকত নদীচরের কৃষিজমিগুলো। কিন্তু এবারের পরিস্থিতিটা কিছুটা ভিন্ন। গত আগস্টে ভয়াবহ বন্যার পানির স্রোতে ভেসে গেছে নদীচরের সব ফসল। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েন চরের কৃষকেরা। তবে আবারও শাকসবজিতে ছেয়ে গেছে গোমতীর চরের কৃষিজমি।
চরের প্রতিটি এলাকার কৃষক শাকসবজি আবাদে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ বছর শাকসবজির উৎপাদন বেশি করতে চান গোমতীর চরের কৃষকেরা। কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার সুবর্ণপুর এলাকার কৃষক আবদুল মমিন বলেন, গোমতীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় এক মাস আগে জমি প্রস্তুত করে ফুলকপি ও বাঁধাকপির আবাদ করেছেন। আশা করছেন, কিছুদিনের মধ্যে এসব সবজি বিক্রি করতে পারবেন। এখন বাজারে সবজির দাম ভালো। এ অবস্থা থাকলে ভালোই লাভ হবে। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রায় দেড় মাস আগে গোমতী নদীর চর থেকে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শাকসবজি আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করতে শুরু করেন কৃষকেরা। এরই মধ্যে লাল-সবুজ রঙের ফসল হাসতে শুরু করেছে গোমতীর চরে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে বাজারে আসবে এসব শাকসবজি। বাজারে সরবরাহ বাড়লে অনেকাংশে কমে যাবে শাকসবজির দাম।
গত বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ভান্তি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চরের কৃষিজমিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। কেউ সবজিখেতের পরিচর্যা করছেন, আবার কেউ কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। কেউ কেউ জমি প্রস্তুত করছেন সবজির চারা রোপণের জন্য। পঞ্চাশোর্ধ্ব কৃষক আলী হোসেন বললেন, তিনি মুলার চাষ করেছেন। গত বছর এই সময়ের মধ্যে মুলা বিক্রিও করেছিলেন। কিন্তু এবার বন্যার কারণে সেভাবে শাকসবজি উৎপাদন করতে পারেননি। তাঁর ৪০ শতক জমির মুলা এখন শাক হিসেবে খাওয়া যাচ্ছে। অনেকে জমিতে এসে মুলাশাক কিনে নিচ্ছেন। প্রতি আঁটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি করছেন। দামটাও বেশ ভালো পাচ্ছেন। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে মুলা বিক্রি করতে পারবেন।
পাশেই আরেকটি জমিতে মিষ্টিকুমড়ার চাষ করেছেন ৩৫ বছর বয়সী সাহাব উদ্দিন। পোকামাকড় থেকে ফসল রক্ষার জন্য কীটনাশক স্প্রে করছেন তিনি। সাহাব উদ্দিন বলেন, মিষ্টিকুমড়ার পাশাপাশি জমিতে মিষ্টি আলুর লতাও লাগিয়েছেন। এবারের বন্যায় তাঁদের সব শেষ হয়ে গেছে। তাই তাঁরা বেশি পরিশ্রম করছেন ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য। তাঁর জমিতে এখনো মিষ্টিকুমড়ার ফলন আসেনি, তবে শাক বিক্রি করছেন। এতে ভালোই আয় হচ্ছে।
বুড়িচং উপজেলার কিং বাজেহুরা এলাকায় গোমতীর চরে গিয়ে কৃষকদের লালশাক, ডাঁটাশাক, পুঁইশাক ও ধনেপাতার আবাদ করতে দেখা গেছে। আলাপকালে কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, বন্যার পানি কমতেই জমি প্রস্তুত করে বিভিন্ন শাক চাষ করেছেন। কারণ, শাক দ্রুত বড় হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে বাজারে বিক্রি করা যায়। বর্তমানে বাজারে দামও ভালো। খেত থেকেই প্রতি আঁটি শাক অন্তত ৩০ টাকা বিক্রি করছেন। বাজারে বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি দামে। সে হিসাবে ভালোই আয় হচ্ছে। এ মাসের শেষ দিকে অন্যান্য সবজির আবাদ শুরু করবেন।
শাক দ্রুত বড় হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে বাজারে বিক্রি করা যায়। বর্তমানে বাজারে দামও ভালো। খেত থেকেই প্রতি আঁটি শাক অন্তত ৩০ টাকা করে বিক্রি করছেন।আলাউদ্দিন, স্থানীয় কৃষক
সম্প্রতি কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সুবর্ণপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর চরে কৃষকেরা ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউশাক, কুমড়াশাক, মুলা, লালশাকসহ বিভিন্ন শাকসবজির চাষ করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে এসব শাকসবজি বিক্রির উপযোগী হবে। একই অবস্থা দেখা গেছে পাশের ঝালুয়াপাড়া ও অরণ্যপুর এলাকায়। প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই কৃষকদের গোমতীর চরে শাকসবজি আবাদে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়।
কুমিল্লার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ের বন্যায় গোমতীর চরের কৃষকেরা ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তবে এখানকার কৃষকেরা পরিশ্রমী। এ কারণে বন্যার পানি কমতেই ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য শাকসবজির আবাদ পুরোদমে শুরু করেছেন। তিনি গোমতীর চর এলাকা ঘুরে দেখেছেন। আশা করছেন, সপ্তাহখানেকের মধ্যে চরের বেশ কিছু সবজি বাজারে আসবে। এতে স্থানীয়ভাবে সরবরাহ বেড়ে গেলে ভোক্তাপর্যায়ে সবজির দাম অনেকটাই কমে আসবে। কারণ, গোমতীর চরের সবজি কুমিল্লার মানুষের চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করে।
সপ্তাহখানেকের মধ্যে চরের বেশ কিছু সবজি বাজারে আসবে। এতে স্থানীয়ভাবে সরবরাহ বেড়ে গেলে ভোক্তাপর্যায়ে সবজির দাম অনেকটাই কমে আসবে।কুমিল্লার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইউব মাহমুদ
গত ১৯ আগস্ট থেকে অব্যাহত বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হতে থাকে। তলিয়ে যায় পুরো গোমতী নদীর চর। এবারের বন্যায় জেলায় রোপা আমনের বীজতলা, রোপা আমন, শাকসবজি, রোপা আউশ, রোপা আমন ও আখের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলার প্রায় ৭৪ হাজার হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে কৃষি খাতে প্রায় ৭৫৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা কৃষি বিভাগ জানায়।