গায়ে কেরোসিন ঢেলে গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যা, স্বামী আটক
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় ফেরদৌসী বেগম (২৫) নামের এক গৃহবধূর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপজেলার গাজীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় উপজেলার চরমাছুয়া টেম্পোঘাট এলাকা থেকে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় গৃহবধূটির স্বামী মো. ইয়াসিনকে (৩০) আজ সকালে আটক করে পুলিশ। স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় ও পারিবারিক কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানিয়েছে।
নিহত ফেরদৌসী বেগমের বাবার বাড়ি উপজেলার নবুরকান্দি গ্রামে। ওই গ্রামের আবদুল আউয়ালের মেয়ে তিনি। ফেরদৌসীর শ্বশুরবাড়ি উপজেলার গাজীপুর গ্রামে। ওই গ্রামের অটোরিকশাচালক মো. ইয়াসিনের স্ত্রী তিনি। ফেরদৌসী ও ইয়াসিন দম্পতির দুটি ছেলে রয়েছে।
পরিবার, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগে পারিবারিকভাবে উপজেলার গাজীপুর এলাকার অটোরিকশাচালক মো. ইয়াসিনের সঙ্গে ফেরদৌসী বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই পারিবারিক নানা বিষয়ে স্বামীর সঙ্গে ফেরদৌসীর ঝগড়াঝাঁটি হতো। এ ছাড়া পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় ফেরদৌসীর ওপর ক্ষিপ্ত হন তাঁর স্বামী। গতকাল দিবাগত রাত ১২টার পর এসব বিষয় নিয়ে স্বামীর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে ফেরদৌসীর কথা-কাটাকাটি হয়। পরকীয়া প্রেম থেকে সরে আসতে স্বামীকে চাপ দেন ফেরদৌসী। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গতকাল গভীর রাতে ফেরদৌসীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তাঁর স্বামী। এ সময় তাঁর শ্বাস রোধও করা হয়। এ সময় ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি (ফেরদৌসী)। তখন বাড়িতে ফেরদৌসীর দুই শিশুসন্তান ছাড়া কেউই ছিল না। হত্যার পর নিজের অটোরিকশায় করে ফেরদৌসীর লাশ উপজেলার চরমাছুয়া টেম্পোঘাট এলাকায় ধনাগোদা নদীর তীরে ফেলে যায় তাঁর স্বামী।
ফেরদৌসীর বোন মনোয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, তাঁর বোনকে হত্যা করার পর আজ ভোরে তাঁর (মনোয়ারা) কাছে তাঁর ভগ্নিপতি ইয়াসিন মুঠোফোনে ফোন করেন এবং তাঁর বোন কোথায় জানতে চান। তাঁর (ইয়াসিন) কথাবার্তায় সন্দেহ হলে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আজ সকালে গাজীপুর গ্রামে যান। সেখানে ফেরদৌসীকে পাননি। তাঁর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে ইয়াসিন নানা অসংলগ্ন কথা বলেন। পরে সেখানে তাঁকে আটক করে বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ এসে ইয়াসিনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ইয়াসিনের দেওয়া তথ্য অনুসারে তাঁর বোনের লাশ চরমাছুয়া টেম্পোঘাট এলাকায় ধনাগোদা নদীর তীর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল হক বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ওই গৃহবধূর লাশ চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনায় তাঁর থানায় হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আটক মো. ইয়াসিনকে চাঁদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পাঠানো হবে। এটি একটি পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ ও স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।