‘আমার ছেলে নাই, অহন আমার আর কিছুই নাই’

জানাজা শেষে চারজনের লাশ দাফনের প্রস্তুতি নেন স্থানীয় লোকজন। শুক্রবার দুপুরে শেরপুর সদর উপজেলার ভীমগঞ্জ বড় ঈদগাহ মাঠেছবি: দেবাশীষ সাহা রায়

‘ছেলেই আমার সবকিছু ছিল। আমগরে দেখাশোনা করা, সংসার চালানো সবকিছুই ছেলে মোতালেবই করত। দুর্ঘটনায় ছেলেসহ আমার পরিবারের চারজন মইরা গেছে। আমার ছেলে নাই, অহন আমার আর কিছুই নাই।’ আজ শুক্রবার দুপুরে পরিবারের চার সদস্যের দাফন শেষে নিহত আবদুল মোতালেবের বৃদ্ধ বাবা নাজিম উদ্দিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ কথা বলেন।

নাজিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমি বড় অসহায় হয়ে পড়ছি। তাই সরকারের কাছে আমার আবেদন, সরকার যেন আমগরে একটু দেখে।’

গত বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে পিরোজপুর সদর উপজেলায় প্রাইভেট কার খালে পড়ে দুই পরিবারের মোট আট সদস্য নিহত হন। তাঁদের মধ্যে শেরপুর জেলা সদর উপজেলার একই পরিবারের চার সদস্য ছিলেন। তাঁরা হলেন সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের মো. নাজিম উদ্দিনের ছেলে আবদুল মোতালেব (৩৬), মোতালেবের স্ত্রী সাবিনা আক্তার (৩০), মেয়ে মুক্তা (৯) ও ছেলে সোয়াইব (৪)।

নিহত মোতালেব ঢাকা সেনানিবাসে বেসরকারি কর্মচারী হিসেবে চাকরি করতেন। পরিবার নিয়ে তিনি ঢাকায়ই থাকতেন। মঙ্গলবার তাঁরা কুয়াকাটায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। ঢাকায় ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তাঁরা নিহত হন।

আজ দুপুর ১২টার দিকে শেরপুর সদর উপজেলার ভীমগঞ্জ বড় ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে রঘুনাথপুর দীর্ঘপাড়া কেন্দ্রীয় গোরস্তানে মোতালেব, তাঁর স্ত্রী সাবিনা আক্তার, মেয়ে মুক্তা ও ছেলে সোয়াইবের লাশ দাফন করা হয়। এর আগে সকালে পিরোজপুর থেকে নিহত চারজনের লাশ রঘুনাথপুর গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছালে স্বজনদের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ সময় মোতালেবের বৃদ্ধ মা-বাবা, স্বজন ও প্রতিবেশীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে শোকের মাতম।

প্রতিবেশী ও স্বজনেরা লাশ দেখতে ভিড় করেছেন। শুক্রবার দুপুরে শেরপুর সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

দুপুরে রঘুনাথপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিহত মোতালেবের বাড়িতে প্রতিবেশী ও স্বজনেরা ভিড় করেছেন। ছেলে ও পরিবারের অন্যদের হারিয়ে মোতালেবের বৃদ্ধা মা ময়না বেগম ও বড় বোন লাভলী বেগম কাঁদছেন। ছেলেসহ অন্যদের মৃত্যু মা ময়না বেগম কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। মোতালেবের বড় বোন লাভলী বেগম আহাজারি করে বলেন, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। ১৫-১৬ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এর পর থেকে দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকতেন। ছোট ভাই মোতালেবই সবার ভরণপোষণ ও চিকিৎসার খরচ বহন করতেন। ভাই মারা যাওয়ায় তাঁরা সবাই বড় অসহায় হয়ে পড়লেন। এখন কীভাবে সংসার চলবে, কিছুই বুঝতে পারছেন না।

আরও পড়ুন

জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রশীদ পলাশ বলেন, নাজিম উদ্দিনের কোনো কৃষিজমি নেই। সংসারের সব খরচই বহন করতেন মোতালেব। তাঁর (মোতালেব) মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। পরিবারটিকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য সরকারের কাছে তিনিও আবেদন জানাবেন।

এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘আল্লাহ আমারে এ কেমন শাস্তি দিল, পুরা সংসারটা ভাইঙ্গা গেল’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।