শহরের আনাচকানাচে ঝুলছে শজনে ডাঁটা
বসন্তে ফোটা ফুলে ম–ম গন্ধ ছড়িয়েছিল কয়েক দিন আগেই। সেই ফুল থেকে সবজিতে রূপান্তর হতে সময় নিয়েছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ। সাদা সুউচ্চ ভবন থেকে শুরু করে সব ধরনের বাড়ির আশপাশে দাঁড়িয়ে আছে এসব গাছ। ঔষধি গুণে ভরপুর এই গাছের নাম শজনে। রাজশাহী শহরের আনাচকানাচে শজনেগাছগুলোয় ঝুলছে শজনে ডাঁটা।
রাজশাহী শহরকে আলাদা করে তুলেছে এই যত্রতত্র শজনেগাছ। অনেক সুউচ্চ ভবনের পাশে ফাঁকা জায়গায় এই গাছ রয়েছে। এর পাতারও রয়েছে ঔষধি গুণ। পারিবারিক ও আত্মীয়স্বজনের চাহিদা মিটিয়ে অনেকে এই সবজি হাটবাজারে বিক্রি করছেন। বাজারে বর্তমানে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে শজনে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরে কোনো শজনের আলাদা করে বাগান বা চাষের জমি নেই। শহরজুড়ে রাস্তাঘাট, বাজার, বাসাবাড়ির পাশে বিচ্ছিন্নভাবে শজনেগাছ রয়েছে। চলতি বছর সাড়ে ৮ হেক্টরে শজনে চাষের হিসাব করা হয়েছে। উৎপাদন ধরা হয়েছে ৬৮ মেট্রিক টন। গত বছরও ৫০ মেট্রিক টনের বেশি শজনের উৎপাদন হয়েছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) সাবিনা বেগম বলেন, শজনের ঔষধি গুণ অনেক। মানুষ এখন অনেক সচেতন। এ কারণে বাসাবাড়ির আশপাশে ফাঁকায় জায়গায় তাঁরা একটি হলেও শজনেগাছ লাগিয়েছে। নগরে আলাদা করে কোনো বাগান নেই, কিন্তু শহর অনুযায়ী রাজশাহীতে ব্যাপক পরিমাণে শজনেগাছ রয়েছে। অন্য শহরগুলোয় সচরাচর তা চোখে পড়ে না। তা ছাড়া সবজি হিসেবে শজনের বাজারমূল্যও অনেক।
মোকারম হোসেনের ‘বাংলাদেশের পুষ্প-বৃক্ষ লতা-গুল্ম’ বইয়ে শজনের কয়েকটি আঞ্চলিক নাম আছে। অঞ্চলভেদে একে সাজনা, শজনে ও সাজিনা নামে ডাকা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Moringa oleifera Lamk. বইটিতে বলা হয়েছে বসন্তের শুরুতে নতুন পাতা ও ফুল আসে। বারমাসি গাছগুলো চৈত্র থেকে কার্তিক পর্যন্ত ফল দেয়। পাতা একান্তর, দ্বিপক্ষল, ফ্যাকাশে সবুজ রঙের। কচি ফল ও পাতা আদর্শ সবজি, পাতায় প্রচুর আমিষ আছে। আদি আবাস ভারত ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ।
রাজশাহী নগরের মূল রাস্তা থেকে ভেতরে শজনেগাছের দেখা পাওয়া যায়। অনেক বড় রাস্তার ধারেও রয়েছে শজনেগাছ। যেমন নগরের মেহেরচণ্ডী দায়রাপাক মোড় থেকে কড়ইতলা রাস্তা পর্যন্ত দুধারে বাড়ির পাশে সারি সারি শজনেগাছ। এসব গাছে পাতার চেয়ে শজনেই বেশি। এই এলাকার বাসিন্দা মিনা বেগমের একটি শজনেগাছে এত পরিমাণ শজনে ডাঁটা ধরেছে যে গাছের ডালই নুয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, বছর চারেক আগে গাছের ডাল পুঁতে দিয়েছিলেন। তখন থেকেই শজনে আসে। এবার তো অনেক বেশি শজনে এসেছে। গাছের পাতাই মনে হচ্ছে সে তুলনায় কম।
নগরের মহিষবাথান এলাকায় থাকেন বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকপ্রাপ্ত কৃষক মো. মনিরুজ্জামান। তাঁর বাড়িতে দুটি বড় শজনেগাছ। একতলা বাড়ির ছাদ পর্যন্ত গাছ উঠে গেছে। তিনি বলেন, আট বছর আগে তাঁর বাবা শজনের ডাল মাটিতে পুঁতে দিয়েছিলেন। সেই থেকে শজনে দিয়ে যাচ্ছে। এই গাছ থেকে মৌসুম বাদেও সারা বছরই শজনে খেতে পারেন তারা। বিভিন্ন সময়ে শজনেপাতাও খাওয়া হয়। এত পরিমাণ শজনে আসে যে নিজেরা খেয়ে আত্মীয়স্বজনদেরও দিতে পারেন।
মো. মনিরুজ্জামান আরও বলেন, রাজশাহী শহরজুড়ে শজনেগাছ আছে। তবে তা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। চারদিকে সুউচ্চ ভবন উঠে যাচ্ছে।
নগরের মিজানের মোড়, জাহাজঘাট হয়ে ফুলতলা ঘাট পর্যন্ত রাস্তাঘাটে, বাড়ি বাড়ি শজনেগাছ। এবার ফলনও বেশি। এই এলাকার বাসিন্দা আজিম উদ্দিন বলেন, শহরের পদ্মা নদীর বাঁধের এই জায়গাগুলোয় প্রচুর শজনেগাছ। আগে এত গাছ ছিল না, কয়েক বছরে অনেক বেড়ে গেছে।