পাশ থেকে মাটি কাটায় ঝুঁকিতে বেইলি সেতু, পাউবোর মামলা
শীত মৌসুম এলেই কুমিল্লার গোমতী নদীর বাঁধের ভেতরের জমি ও নদীর পাড় থেকে অবাধে মাটি কাটা শুরু হয়। এতে নদীর দুই কূলের বাঁধ ধ্বংস হচ্ছে। নদীর বাঁধের ওপরের পাকা সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবার কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের চাঁনপুর এলাকার বেইলি সেতুর পাশ থেকেই মাটি কাটা হয়। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে বেইলি সেতু।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে থানায় মামলা করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোমতী নদীর চাঁনপুর এলাকায় বেইলি সেতু। নদীর দক্ষিণ পাড়ের পূর্ব অংশে বেইলি সেতুর গা ঘেঁষে মাটি কাটা হচ্ছে। রাতে মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হয়। এরপর ট্রাক ও ট্রাক্টর দিয়ে মাটি পারাপার করা হয়। মাটি কাটায় যেকোনো সময়ে ধসে পড়তে পারে বেইলি সেতু।
এ দিকে খবর পেয়ে পাউবোর কর্মকর্তারা গত রোববার ঘটনাস্থলে যান। এ ঘটনায় কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে মামলা করে পাউবো। এই সেতু দিয়ে জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা হয়ে সালদা নদী দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় চলাচল করে শত শত যানবাহন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাটি কাটা নিয়ে পাউবো কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয় না। প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। উজান থেকে (ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য) পাহাড়ি ঢল নেমে নদীতে পানি বাড়লে এই সেতু টেকানো কঠিন হবে। তখন নদীর এপারের সঙ্গে ওপারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা রয়েছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ষাটের দশকে কুমিল্লা শহর ও আশপাশের উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা রক্ষার জন্য গোমতী নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়। গোমতী নদীর বাম বাঁধের দৈর্ঘ্য ৭৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার ও ডান বাঁধের দৈর্ঘ্য ৬৫ কিলোমিটার। বাঁধের উপরে পাকা সড়ক। এই বাঁধের উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করে। নদীর দুই কূলের বাঁধের অন্তত ৩০টি স্থানে বাঁধের পাড় কাটা আছে ট্রাক্টর ওঠানামার জন্য। এতে বাঁধ ও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোথাও কোথাও সড়ক ভেঙে পড়েছে। কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলি ইউনিয়নের বানাসুয়া এলাকায় নদীর পাড় ও চরের ফসলি জমি থেকে ট্রাক্টর নিয়ে অবাধে মাটি কাটতে দেখা গেছে। একই উপজেলার আমতলি পালপাড়া বড় বাড়ি, দুর্গাপুর, আড়াইওড়া, ছত্রখিল, বুড়িচং উপজেলার বাবু বাজার, শিমাইলখাড়া, গোবিন্দপুর এলাকাজুড়ে চলছে অবাধে মাটি কাটা।
এর আগে আদর্শ সদর উপজেলার আমতলি এলাকায় গোমতী নদীর বাঁধের ভেতরে মাটি কাটার কারণে বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে যায়। নদীর উত্তর অংশে বুড়িচং উপজেলার কামারখাড়া এলাকায় সেতুর পূর্বপাশে বাঁধের ভেতরে একাশিয়া, মেহগনিগাছের বাগান। বাগানের দক্ষিণ পাশে গা ঘেঁষে নদী। ওই অংশে নদীর বাঁধের ভেতর থেকে মাটি কেটে এখন রীতিমতো পুকুর বানানো হয়েছে।
পাউবো কুমিল্লার পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ (পওর) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান ১৭ জানুয়ারি বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন দিন আগে এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে মামলা হয়েছে। মাটি কাটার কারণে বেইলি সেতু ঝুঁকিতে আছে। আমাদের নিজস্ব কোনো জনবল নেই। আমরা সীমিত জনবল দিয়ে চেষ্টা করছি নদী রক্ষা করতে। প্রশাসনও ভ্রাম্যমাণ আদালত করে সাজা দিচ্ছে। এ নিয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়ের সঙ্গে গত বুধবারও কথা হয়েছে।’
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে। বেইলি সেতু এলাকার পাড় কেটে যাঁরা মাটি নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নদী রক্ষায় অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর বলেন, ‘গোমতী নদী নিয়ে কারও কোনো উদ্যোগ নেই। এবার বেইলি সেতুর কিনারার মাটিও কাটা হয়। বহুবার আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। মাটি কাটাও বন্ধ হয়নি।’