বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি প্রত্যাখ্যান করে কার্যালয়ে তালা, অগ্নিসংযোগ, বিক্ষোভ
বগুড়ায় ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পরপরই পদবঞ্চিতরা জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। টাকার বিনিময়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া কয়েকজন নেতাও রয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আজ সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁদের বিক্ষোভ চলছিল।
বিক্ষোভস্থলের কাছেই বগুড়া সদর ফাঁড়ি। ওই ফাঁড়ির পরিদর্শক (ইনচার্জ) শাহিনুজ্জামান ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে তাঁদের কাছে ওপরের কোনো নির্দেশনা আসেনি বলে জানান তিনি।
আজ রাত নয়টার দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সাত বছর পর সম্মেলন ছাড়াই ঘোষিত এই কমিটিতে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০ জনের নাম আছে। এর পরপরই বগুড়া শহরের টেম্পল সড়কে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জড়ো হন বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা। ওই ভবনে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী সব সংগঠনের কার্যালয় অবস্থিত। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা কমিটি প্রত্যাখ্যান করে ওই ভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। কার্যালয়ের সামনে টেম্পল সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা।
সোমবার রাত নয়টার দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ওবায়দুল্লাহ সরকার, শহর ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত কুমার দাস এবং তাঁদের অনুসারীরা রয়েছেন। দুজন ঘটনাস্থল থেকে প্রথম আলোকে বলেন, এই কমিটি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। তাঁদের সঙ্গে নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া সিদ্ধার্থ কুমার দাস, রাকিবুল হাসান, আহসান হাবীব, নুর মোহাম্মদ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে কার্যালয়ের সামনে বক্তব্য দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদ পেয়েছেন সজীব সাহা। তিনি আগের কমিটির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন আল-মাহিদুল ইসলাম।
সহসভাপতি পদ পেয়েছেন ১৭ জন। তাঁরা হলেন তৌহিদুর রহমান, মিথিলেস কুমার, রাকিবুল হাসান, সাজ্জাদ আলম, নুর মোহাম্মদ, মুকুল ইসলাম, শেখ হৃদয়, আতিকুর রহমান, রায়হান কবীর, তোফায়েল আহমেদ, সিদ্ধার্থ কুমার দাস, শামিমা সুমি, জাহিদ হাসান, আল আমিন হোসেন, অনুরাগী তিশা, সবুজ বিশ্বাস ও রাকিবুল হাসান।
যুগ্ম সম্পাদক পদ পেয়েছেন মাহফুজার রহমান, রাকিবুল হাসান, মিনহাজুল ইসলাম সজল, আহসান গালিব ও আহসান হাবীব। সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন আল নোমান সাব্বির, আল ইমরান হোসেন, নয়ন অধিকারী, বজলুর রহমান, রিয়াজ মাহমুদ ও সুজন আকন্দ।
ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা বলেন, বগুড়া ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল-মাহিদুল ইসলাম জেলা ছাত্রলীগের সদস্য নন। জেলা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে কখনো অংশও নিতে দেখেননি কেউ। তিনি আদমদীঘি উপজেলার বাসিন্দা। থাকেন ঢাকায়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খানের সঙ্গে সখ্য থাকায় তিনি পদ বাগিয়েছেন। এ ছাড়া কমিটিতে স্থান পাওয়া আরও কয়েকজনের জেলা কমিটিতে সদস্যপদও ছিল না। পদ পাওয়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে নাশকতা, চাঁদাবাজি, ভাঙচুর মামলা ও মাদক সেবনের অভিযোগ আছে।
বগুড়া ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমানের অনুসারী।
সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছিলেন মুকুল হোসেন। তিনি পদবঞ্চিত হওয়ার পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। লিখেছেন, ‘ভালোবাসার সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিদায়।’
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৭ মে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়। ওই বছর ১২ মে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্রলীগের জেলা কমিটির মেয়াদ এক বছর। তবে সাত বছর পরও সম্মেলন না হওয়ায় প্রায় স্থবির সাংগঠনিক কার্যক্রম। এ বছরের ২১ জানুয়ারি ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হয়। পরে ২ ফেব্রুয়ারি শহীদ টিটু মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ৫৬ নেতা জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। সেখানে দ্রুত কমিটি গঠনের আশ্বাসও দেন নেতারা।