বাগেরহাটে বিএনপি নেতাকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে: পুলিশ

বাগেরহাটে বিএনপি নেতা সজীব তরফদারকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আবু বক্কর শিকদার ও উদ্ধারকৃত অস্ত্রছবি: প্রথম আলো

বাগেরহাটে বিএনপি নেতা সজীব তরফদারকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় আবু বক্কর শিকদার (৫৭) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আবু বক্কর শিকদার বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের কাড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

আজ শনিবার দুপুরে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। আবু বক্করের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের কথা জানিয়ে পুলিশ বলছে, ভাড়াটে খুনি দিয়ে চুক্তিতে হত্যা করা হয় সজীব তরফদারকে।

৫ নভেম্বর দুপুরে সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের মধ্যপাড়া জামে মসজিদের সামনে বাগেরহাট-রামপাল (গিলাতলা) সড়কের ওপর সজীব তরফদারকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় সজীবের সঙ্গে একই মোটরসাইকেলে থাকা তাঁর চাচা কামাল হোসেন তরফদার (৬৫) গুলিবিদ্ধ হন।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিই। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়। তাঁরা দিনরাত কাজ করেন। ঘটনাস্থলের আলামত, সার্বিক পরিস্থিতি এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা যা পেয়েছি, তা হলো কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেন ৪ জন, যাঁদের সবাই ভাড়াটে খুনি। এই চারজনের মধ্যে একজনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। ওই ব্যক্তি স্বীকার করেছেন, তাঁরা ভাড়াটে খুনি এবং তাঁদের মধ্যে চুক্তি হয়েছে খুন করার জন্য।’

আরও পড়ুন

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আবু বক্কর এবং তাঁর এক সহযোগীর সঙ্গে তিন লাখ টাকার চুক্তি ছিল বলে জানিয়েছেন। অন্য দুজনের সঙ্গে কত টাকার চুক্তি ছিল, সেই বিষয়ে তিনি কিছু জানে না বলেছেন।

ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও মোরেলগঞ্জ সার্কেল) এস এম আশিকুর রহমান, বাগেরহাট সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার আশা প্রকাশ করে পুলিশ সুপার বলেন, ‘হত্যার সম্ভাব্য পাঁচটি কারণ নিয়ে কাজ করছি। তদন্ত শেষ না হলে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে না।’

পুলিশ সুপার জানান, শুক্রবার পার্শ্ববর্তী পিরোজপুর জেলার কাউখালী এলাকা থেকে তাঁকে আটক করা হয়। পরে তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সজীব তরফদারকে হত্যায় ব্যবহৃত দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি এবং একটি রামদার হাতল মির্জাপুর সাহাপাড়ার এলাকার জনৈক যমুনা সাহার বাড়ির পাশের ডোবার পানি থেকে উদ্ধার করা হয়।

এদিকে সজীব হত্যার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী নাইমা ফারহানা গতকাল শুক্রবার রাতে বাগেরহাট সদর মডেল থানায় ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৮-১০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। এ ছাড়া অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে উপপরিদর্শক (এসআই) আনজির হোসেন বাদী হয়ে একই আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে পৃথক একটি মামলা করেছেন। আটক আবু বক্করকে এই দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুন

নিহত সজীব তরফদার বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। তাঁর পরিবার ভাষ্য, সজীব দুবারের ইউপি সদস্য ছিলেন। এর আগে আওয়ামী লীগ সকারের সময় একাধিকবার তাঁর ওপর হামলা হয়েছে। তিনি ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। এলাকায় জনপ্রিয়তাই তাঁর কাল হয়েছে।

তবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে একাধিকবার নির্যাতনসহ বিভিন্ন মামলায় জেল খেটেছেন সজীব তরফদার। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ডেমা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে চিংড়িঘের, গরু, মহিষ ও জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। ঘেরের এলাকা বলে এখানে প্রচুর কাঁচা টাকা। চাঁদাবাজি, দখল নিয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন, হত্যার পেছনে এটাও একটা কারণ হতে পারে।