ভোটকেন্দ্রে না এলে ভাতার তালিকায় লাল চিহ্ন পড়ে যাবে: আওয়ামী লীগ নেতা
ভোট দিতে কেন্দ্রে না এলে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ভাতাভোগীদের কার্ড বাতিলের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মাগুরার শালিখা উপজেলার শতখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে ঝন্টু।
গতকাল শনিবার বিকেলে শালিখা উপজেলার শতখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর এক নির্বাচনী সভায় তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। সভায় মাগুরা-২ (মহম্মদপুর-শালিখা-সদরের একাংশ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার প্রধান অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, গতকাল বিকেলে শতখালী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারের পক্ষে নির্বাচনী পথসভার আয়োজন করে শতখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। সভায় প্রধান অতিথিসহ সবার বক্তব্যের শেষে সন্ধ্যার দিকে সভাপতির বক্তব্য দেন আনোয়ার হোসেন। তাঁর বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘যারা নির্বাচনের দিন ৭ তারিখে ভোটকেন্দ্রে আসবেন, তাঁদের আমরা চেনব। প্রত্যেকের নামের পাশে টিক (চিহ্ন) দেওয়া থাকবে। ওই টিকের খাতা সন্ধ্যার সময় আমি আমার কাছে নিয়ে নেব। আটটা সেন্টারের (কেন্দ্রের) প্রতিটির ভোটার লিস্ট (তালিকা) আমার কাছে জমা হয়ে যাবে রাতের বেলায়। পরের দিন আমরা যাচাই-বাছাই করব যে কোন বন্ধু আপনারা ভোট দিতে আসেন নাই। তাঁদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’
ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, কৃষকের মাঝে সার এবং বীজ বিতরণ করি। আপনারা টিসিবির মাল পাচ্ছেন না? এই টিসিবি ভোগী ৭ হাজার ৪০০ খানা আমার ইউনিয়নে, সেখান থেকে ৩ হাজার ৪২০টা টিসিবির কার্ড আছে আমার শতখালী ইউনিয়নে। টিসিবির মাল নেন, এই জামাত হোক, বিএনপি হোক আর যেই হোক, প্রত্যেক বন্ধুকে সেন্টারে আসতি হবে। আর যদি না আসে, টিসিবির মালও পাবে না। একচুলও কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবে না। সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত (হবে)।’
আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ৪৮০টা কার্ড আছে, যারা ৩০ টাকা কেজি চাউল পায়। তার মধ্যে জামায়াত-বিএনপির বন্ধুরা নাই? এই বন্ধুদের আমি ভোটার লিস্ট হাতে নিয়ে টিক নাম্বার (চিহ্ন) দেখতে চাই। যারা ৩০ টাকা কেজি চাউল খাচ্ছে, এই যে আমার মা-বোনেরা আসছিল অনেকেই, তাদের যেন ভোট সেন্টারে আমি দেখতে পাই। যেকোনো বিনিময়ে তাদের ভোট সেন্টারে যেতে হবে।’
ভোটারদের হুঁশিয়ার করে আনোয়ার আরও বলেন, ‘যারা ৩০ টাকা কেজিতে চাউল পায় তাদের সবাইকে আমি চিনি। তাদের সবাইকে ভোট সেন্টারে হাজির হতে হবে। বাই হুক ওর বাই ক্রুক (যেকোনো মূল্যে)। হাজির হতে না পারলে লাল চিহ্ন পড়ে যাবে পরের দিন। পরিষ্কার কথা। লাল চিহ্ন দিয়ে দেব। আর বন্ধুত্ব দরকার নেই।’
তবে ভোটারদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন। মুঠোফোনে বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ রকম কথা বলিনি। আমি বলেছি, যারা সকল সুবিধা নিচ্ছে এই ১৫ বছর। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি আমরা সবাইকে মাল দি, তাহলে আমাদের দুঃসময় ৭ তারিখ। আপনারা ভোট সেন্টারে অবশ্যই আসবেন। আমি করজোড়ে অনুরোধ করতেছি।’
ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন মঞ্চে বসে ছিলেন নৌকার প্রার্থী বীরেন শিকদার, শালিখা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বাসুদেব কুণ্ডু প্রমুখ। জানতে চাইলে সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ রকম কোনো বক্তব্য আমি খেয়াল করিনি। এ বিষয়ে না শুনে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। তবে এ ধরনের কথা বলা ঠিক না।’
মাগুরা-২ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও শালিখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হরে কৃষ্ণ অধিকারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। তবে এমন কোনো কথা বলার সুযোগ নেই। কারণ ভোট দেওয়া বা না দেওয়া জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার।’