মন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে সড়ক ছাড়লেন চা-শ্রমিকেরা

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা সদরের জাঙ্গিরাই এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে নামেন চা–শ্রমিকরা। পরে মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের আশ্বাসে সড়ক থেকে সরে যান তাঁরা
ছবি: প্রথম আলো

দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে চলমান ধর্মঘটের ১২তম দিনে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা সদরের চা-শ্রমিকেরা মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। জাঙ্গিরাই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মুমিত চত্বরে আজ বুধবার দুপুরে শ্রমিকদের এ অবরোধে সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুন

পরে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে আসা পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী ও মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য শাহাব উদ্দিন বিক্ষোভ স্থলে যান। তিনি তিন দিনের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার ধামাই, শিলঘাট ফাঁড়ি, সোনারুপা, পুঁচি ফাঁড়ি, আতিয়াবাগ, শিলুয়া ও রাজকি চা-বাগানের অন্তত দুই হাজার শ্রমিক মিছিল নিয়ে এম এ মুমিত চত্বরে জড়ো হন। একপর্যায়ে তাঁরা সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। এ সময় ‘এক দফা, এক দাবি, ৩০০ টাকা মজুরি’, ‘মজুরি নিয়ে টালবাহানা, চলবে না, চলবে না’, ‘সরকার নীরব কেন, জবাব চাই-জবাব চাই’, ‘গরিবের পেটে লাথি মারা, চলবে না, চলবে না’ ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকেন শ্রমিকরা। তাঁদের অবরোধের কারণে সড়কের দুই পাশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট দেখা দেয়।

আরও পড়ুন

একই সময়ে উপজেলা পরিষদের মিলনায়তনে একটি সরকারি অনুষ্ঠান চলছিল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। শ্রমিকদের অবরোধের খবর পেয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগের নেতা ও পুলিশের কর্মকর্তারা গিয়ে জনদুর্ভোগের কথা তুলে ধরে অবরোধ সরিয়ে নিতে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের অনুরোধ করেন। কিন্তু শ্রমিকেরা তাঁদের অনুরোধ না মেনে ফিরিয়ে দেন। সরকারি অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বেলা সোয়া দুইটার দিকে বিক্ষোভস্থলে যান।

এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা মন্ত্রীকে বলেন, বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় ১২০ টাকা মজুরিতে কোনোভাবেই তাঁদের সংসার চলে না। ৩০০ টাকা মজুরি না পেলে তাঁরা আন্দোলন থেকে সরে আসবেন না। তাঁরা সব নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেন। অভাব-অনটন সয়েও তাঁরা মজুরির দাবিতে ১৩ দিন ধরে ধর্মঘট পালন করছেন। অথচ এ পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি বা আওয়ামী লীগের নেতা তাঁদের পাশে দাঁড়াননি।

আরও পড়ুন

মন্ত্রী শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, সরকার আপনাদের পাশে ছিল, আছে। আপনাদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। মজুররি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আপনাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত দেবেন। তিন দিনের মধ্যেই বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে। আপনারা রাস্তা ছেড়ে বাড়ি ফিরে যান। মন্ত্রীর বক্তব্যের পর শ্রমিকেরা বলেন, তিন দিনের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে তাঁরা পুনরায় সড়ক অবরোধ করবেন। পরে শ্রমিকেরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নিজেদের বাগানে ফিরে যান।

৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের সংগঠন চা শ্রমিক ইউনিয়ন ১৩ আগস্ট থেকে দেশের সব চা-বাগানে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকে। ২০ আগস্ট সরকারের সঙ্গে সংগঠনের নেতাদের বৈঠকে মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ অবস্থায় চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। কিন্তু বৈঠকের পরপরই ১৪৫ টাকা মজুরি প্রত্যাখান করে বিভিন্ন বাগানে সাধারণ শ্রমিকেরা ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

পরে ২১ আগস্ট রাতে জেলা প্রশাসন, শ্রম দপ্তরের প্রতিনিধি, শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে ১২০ টাকা মজুরি রেখেই কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বেতন বাড়ানোর বিষয়টি দেখবেন। এ প্রস্তাব মেনে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন ইউনিয়নের নেতারা। কিন্তু এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকদের একটি অংশ ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন।