ব্রহ্মপুত্রপাড়ে গণশৌচাগার নির্মাণে জড়িতদের বিচারের দাবিতে গণ–অবস্থান
ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে গণশৌচাগার তৈরির পরিকল্পনাকারীদের বিচার এবং কাঠামোটির অপসারণের দাবিতে গণ–অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন নাগরিকেরা। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে নগরের জুবিলিঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্রপাড়ে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে ‘ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন’–এর ব্যানারে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হন। দাবি না মানলে আগামী বৃহস্পতিবার সিটি করপোরেশন ঘেরাও করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
গণ–অবস্থান কর্মসূচিতে ‘ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক’ আবুল কালাম আল আজাদ বলেন, ‘আমাদের গণশৌচাগার দরকার, কিন্তু নদীর ভেতরে নয়। যে জায়গায় গণশৌচাগার হচ্ছে, সেটা সন্ধ্যার পর নির্জন থাকে, মানুষ আসে না। এটি আসলে নদী দখলের প্রচেষ্টা কেবল। আমাদের দাবি অনুযায়ী এখনো স্থাপনা সরানো হয়নি। আমরা আরও কিছু সময় দিতে চাই। আগামী বুধবারের মধ্যে মালামাল সরানো না হলে বৃহস্পতিবার সিটি করপোরেশন ঘেরাও করা হবে। যারা পরিকল্পনা বানিয়েছে ও বাস্তবায়নে জড়িত, তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।’
গণশৌচাগারের আড়ালে শক্তিশালী পাইলিং করা হয়েছে জানিয়ে আবুল কালাম আরও বলেন, গণশৌচাগার কেবল অসিলামাত্র। এর পেছনে আছে মাস্টারপ্ল্যান। নদের জমি দখল করার জন্য শহরের ভূমিদস্যুরা পরিকল্পনা করে রেখেছে। আর এ কাজে বারবার বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে সহায়তার চেষ্টা করে সিটি করপোরেশন। এই ব্রহ্মপুত্রের বুকে কোনো অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।
ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের আরেক কর্মী ও শিল্পী হোসাইন ফারুক বলেন, ময়লার গাড়ির আড়ালের এমন একটি জায়গা নির্ধারণ করেছে, যেখানে মানুষ আসে না। সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি রাখার আড়ালে নদী দখলের কর্মযজ্ঞ হচ্ছে।
স্থানটিতে সিটি করপোরেশন সম্প্রতি গণশৌচাগার নির্মাণের কাজ শুরু করে। তবে নাগরিকদের প্রতিবাদের মুখে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি নির্মাণাধীন মালামাল সরিয়ে নিতে গত বৃহস্পতিবার ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। এদিকে নদের পাড়ে কিছু এলাকাজুড়ে পাইলিং করাকে ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মিঞা এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও মেশিনারি সরবরাহ প্রকল্পটি ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদন দেয়। ১২২ কোটি টাকার এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে ৩৫টি গণশৌচাগার নির্মাণ করার কথা। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির সময় তৎকালীন কাউন্সিলররা জায়গা নির্ধারণ করলেও সেখানে কাজ করতে গিয়ে নগরবাসীর বাধার মুখে পড়ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে যেনতেনভাবে কাজ করে সিটি করপোরেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
‘নদী বাঁচাও আন্দোলন’–এর আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান বলেন, কিছুসংখ্যক লোকের স্বার্থান্বেষী মহল নদীকে ভরাট করে দখলের চেষ্টা করছে। আইনে কিছু ত্রুটি থাকার কারণে নদী রক্ষার জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে। সরকারের যেখানে নদীকে রক্ষা করার কথা, সেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই দাঁড়াতে হয়েছে। যারা এ ঘটনায় জড়িত, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নদীর সঠিক আয়তন নির্ণয় করে নদীর ভেতরে থাকা সব স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে।