বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে মৃত্যু শতকের ঘর ছাড়াল, আক্রান্ত ২৪ হাজার ছুঁই ছুঁই
বরিশালে শেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৯৯ জন। গতকাল বুধবার সকাল ছয়টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব এটি। এ নিয়ে বিভাগে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা শতকের ঘর ছাড়াল। গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০১। বিভাগে মোট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৮৭৭।
সর্বশেষ ডেঙ্গুতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে। এর মধ্যে জুবায়ের (১৭) নামের এক কিশোর মারা গেছে বুধবার রাতে। সে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা থেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিল। এর আগে বুধবার বিকেলে একই হাসপাতালে মারা যান সুকুমার রায় (৮২) নামের এক বৃদ্ধ। তিনি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার বাসিন্দা।
সেপ্টেম্বরে রেকর্ড মৃত্যু
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বরিশাল বিভাগে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। সেপ্টেম্বরে এখন পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে দুজনের বেশি রোগী মৃত্যু হয়েছে। আর প্রতিদিন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন গড়ে ৩৩২ রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিভাগে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ১০১ জনের মধ্যে সেপ্টেম্বরের প্রথম ২৭ দিনেই ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা মোট মৃত্যুর ৫৯ দশমিক শূন্য ৪১ শতাংশ। এই ২৭ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৯৯০ জন, যা মোট রোগীর ৩৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
এর আগে জুলাইয়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৪ হাজার ৮৬৭ জন। আর মারা যান ১০ জন। আগস্টে মৃত্যু হয় ২৯ জনের, যা মোট মৃত্যুর ২৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর আক্রান্ত হন ১০ হাজার ২৩৯ জন (জুলাইয়ের দ্বিগুণের বেশি), যা মোট আক্রান্তের ৪২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এর আগে ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ছিলেন মাত্র ৪৩৩ জন। আর মৃত্যু হয়েছিল এপ্রিল ও জুনে একজন করে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে ৯৫ শতাংশই গ্রামের রোগী, যাঁরা স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মারা যাওয়া রোগীদের প্রায় ৯১ শতাংশের বয়স ৪০ থেকে ৭০ বছরের ওপরে। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। এই বিভাগে শিশুদের মৃত্যু এবার কম। যদিও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সৈয়দ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত চেম্বারে প্রায় প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুরা আসছে।’
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসাই হচ্ছে ‘ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট’। রোগীর শরীরে যাতে পানিস্বল্পতা রোধ করা যায়, সে জন্য স্যালাইন অত্যাবশ্যকীয়। ডেঙ্গু রোগীদের মূল ঝুঁকির সময়টা হচ্ছে জ্বর কমে যাওয়ার পর চার থেকে পাঁচ দিন। এ সময় রোগীর রক্তচাপ একেবারে নেমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এতে হৃদ্যন্ত্র স্থবির হয়ে রোগী মারা যেতে পারে। এ সময় রোগীর রক্তচাপ ঠিক রাখাই হলো মূল চিকিৎসা।
শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, বয়স্ক ব্যক্তিরাও এ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল। তাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম। পানিশূন্য হলে দ্রুত রক্তচাপ তলানিতে চলে যায়। দেরিতে হাসপাতালে আনার পর আসলে চিকিৎসকদের কিছুই করার থাকে না। এ জন্য ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখামাত্র দেরি না করে পরীক্ষা করানো এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন। এবার বয়স্ক রোগীদের বেশি মৃত্যুর পেছনে দেরিতে হাসপাতালে আনাটাই মূল কারণ বলে মনে হচ্ছে।