রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোসহ ৭ দফা দাবিতে উখিয়ায় মানববন্ধন, সমাবেশ
‘আর নয় অনুপ্রবেশ, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চায় বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী স্টেশনে। পালংখালী অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে স্থানীয় এলাকাবাসী ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত সমাবেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে ৭ বছর ধরে থাকা সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোসহ ৭ দফা দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে সাত দফা উপস্থাপন করেন অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রবিউল হোসাইন। দাবিগুলো হলো মিয়ানমারে দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার, সম্প্রতি অনুপ্রবেশকারী লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে এফডিএমএন (বায়োমেট্রিক) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতা, স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, চাকরিসহ ক্যাম্প ব্যবস্থাপনায় স্থানীয়দের প্রাধান্য (ন্যূনতম ৫০%), আশ্রয়শিবিরে কাঁটাতারের বাইরে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ বন্ধ, আশ্রয়শিবিরের বাইরে রোহিঙ্গাদের বাসা ভাড়া বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং আশ্রয়শিবিরে চাকরির নিয়োগ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরোয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, উখিয়া-টেকনাফের মানুষ মানবতা দেখিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে জীবন বাঁচিয়েছে। বিশ্ব–স্বীকৃত এই মানবিক দৃষ্টান্তের পরিপ্রেক্ষিত এখন সময়ের পরিক্রমায় পাল্টে গেছে। রোহিঙ্গারা এখন স্থানীয়দের কাছে বিষফোড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ায় আশ্রয়শিবিরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা বাড়ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা সংকটে পড়তে হচ্ছে। কাল বিলম্ব না করে আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিরাপদে নিজেদের দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফেরত পাঠাতে হবে।
সমাবেশে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক এম মোকতার আহমেদ বলেন, দীর্ঘ ১১ মাস যুদ্ধের পর মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে দেশটির রাখাইন রাজ্য দখলে নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এরপর সেখানে নতুন করে সংঘাত শুরু হয়েছে। আবারও রোহিঙ্গারা নাফ নদী অতিক্রম করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। গত দুই মাসে ৭০-৮০ হাজার রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছে। অনেকে উখিয়া, টেকনাফের লোকজনের বাসাবাড়িতে ভাড়ায় থাকছেন। নতুন করে আরও রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটলে উখিয়া-টেকনাফের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পালংখালী অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার। এতে আরও বক্তব্য দেন, কক্সবাজার আদালতের সিনিয়র আইনজীবী রেজাউল করিম, পালংখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন চৌধুরী, পালংখালী ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আবুল আলা রোমান, পালংখালী অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির উপদেষ্টা মোহাম্মদ শাহজাহান, উখিয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর। গত সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির বিরোধ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি রাখাইন রাজ্য আরাকান আর্মির দখলে চলে যাওয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।