কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে উৎসুক জনতা ভিড় করছে। শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ সেখানে ছুটে আসছে। সবার চেহারায় আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার ছাপ, মুখে ট্রেন দুর্ঘটনার কথা।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুর্ঘটনাস্থলে রেললাইনের যেখানে-সেখানে মানুষের রক্ত লেগে আছে। রেললাইনের ফিশপ্লেট নিহত ব্যক্তিদের হাড়, হাতের আঙুল, গলে যাওয়া মস্তিষ্কসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পড়ে রয়েছে। এসব থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। যাত্রীদের সঙ্গে থাকা চাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিসপত্রও এখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। আশপাশে ভিড় করেছে অসংখ্য মানুষ। তারা নাকমুখ চেপে ঘটনাস্থলে ঘুরে ঘুরে পড়ে থাকা বিভিন্ন জিনিস দেখছে।
রেললাইনের ঠিক পাশেই তিনটি বগি অপসারণ করে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। শিশুরা বগির ভেতরে ঢুকে দেখছে। বিভিন্ন বয়সী মানুষ বগির কাছে গিয়ে বিভিন্ন দৃশ্য দেখছে। ট্রেন এলে ঢাকামুখী আপলাইন থেকে লোকজনকে স্থানীয় লোকজন তাদের সরিয়ে দিচ্ছেন। ঘটনাস্থল দিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী সব ট্রেনকে ধীরগতিতে চলতে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের উপস্থিতিও বাড়ছে।
গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ভৈরব রেলস্টেশনের পশ্চিম প্রান্তে এগারসিন্দুর ট্রেনটির পেছনের তিনটি কোচে মালবাহী একটি ট্রেন ধাক্কা দেয়। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনের পেছনের দুটি কোচ উল্টে গিয়ে ১৮ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-কিশোরগঞ্জ—তিন পথে সাড়ে সাত ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে উদ্ধারকাজ শেষ করেন রেলের লোকজন। বর্তমানে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে সব ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা বিলম্বে চলছে।
ট্রেনের সিগন্যালিংয়ের দায়িত্বে থাকা ভৈরব স্টেশনমাস্টার (চতুর্থ গ্রেড) জহুরুন্নেছা বলেন, দুর্ঘটনার জন্য সব ট্রেনের শিডিউলে বিপর্যয় ঘটেছে। সোমবার তিনি সিগন্যালের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের দায়িত্বে কোনো অবহেলা ছিল না। তদন্ত কমিটি হয়েছে। সবকিছু তদন্তে বের হবে।
ভৈরব স্টেশনমাস্টার মো. ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কাল থেকে দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের দায়িত্বে বা সিগন্যালিংয়ে কোনো অবহেলা ছিল না। মালবাহী ট্রেনকে স্টেশনে আসার কোনো সিগন্যাল (সংকেত) দেওয়া হয়নি। তিনি সিগন্যাল অমান্য করে এসেছেন। বাকিটা তদন্তে বের হয়ে আসবে।’
ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা জানিয়েছেন, কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। আজ মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে কমিটির সভাপতি এবং ময়মনসিংহ অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. মাসুদ সরদারকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। অন্য সদস্যরা হলেন নরসিংদীর উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, কিশোরগঞ্জের উপসহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক ও ভৈরব বাজার স্টেশন অফিসার মো. আজিজুল হক।