বৃষ্টি হলেই পানি জমে বসতঘর-আঙিনায়, তিন বছর ধরে দুর্ভোগে শতাধিক পরিবার
হাসি বেগমের বাড়ির আঙিনায় হাঁটুসমান পানি। আঙিনা পেরিয়ে সেই পানি প্রবেশ করেছে ঘরের প্রতিটি কক্ষেও। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে রান্নাসহ ঘরের অন্য কাজ করছিলেন তিনি আর ছেলেমেয়েরা ছিল বিছানার ওপর।
হাসি বেগমের মতো একই রকম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন জামালপুর পৌর শহরের দড়িপাড়া এলাকার শতাধিক পরিবার। সামান্য বৃষ্টি হলে এসব বাড়িঘর, রাস্তা কিংবা আঙিনায় পানি প্রবেশ করে। এ পানি সহজে নামতেও চায় না। প্রায় তিন বছর ধরে এমন অসহনীয় জলাবদ্ধ পরিস্থিতির ভুক্তভোগী তাঁরা। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধি ও পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার প্রতিকার চেয়েও কোনো লাভ হয়নি। তাই বৃষ্টি যেন তাঁদের কাছে আতঙ্কের আরেক নাম।
হাসি বেগম জানান, ‘বৃষ্টি হইলেই আমরা আতঙ্কের মইধ্যে থাকি। ঘরের ভেতর এই বুঝি পানি ঢুকে পড়ল! দুই সপ্তাহ আগে টানা কয়েক দিন বৃষ্টি হইছে। সেই বৃষ্টির পানিই এলাকার ঘরে ঘরে ঢুকেছে; আর নেমে যায়নি। গত দুই সপ্তাহ ধরে ঘরের মইধ্যে পানি। রাইতের বেলা সাপ-পোকামাকড় ঢুকে পড়ে। বিছানায় উঠে বয়ে থাহা লাগে। আমরা এক রহম বানভাসি গো মতোই বসবাস করতাছি। আমরা চরম দুর্ভোগের মইধ্যে রইছি।’
জামালপুর শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের একেবারে সামনেই দড়িপাড়ার অবস্থান। জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে একটি সংযোগ সড়ক এলাকাটির দিকে ঢুকেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ওই সংযোগ সড়ক থেকে নামলেই হাঁটুসমান পানি। দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকায় পানির মধ্যে ময়লা-আবর্জনা ভরপুর। ভাসমান আবর্জনা ও পানির দুর্গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে উঠছিল। একেবারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। পানি ভেঙে এলাকাটিতে প্রবেশ করতেই দেখা গেল—প্রতিটি বাড়ির আঙিনা ও ঘরে পানি। বাসিন্দাদের অনেকেই খাটের ওপর বসে আছে।
পানিবন্দী এসব বাসিন্দাদের একজন জেসমিন আক্তার। তিনি বলেন, পানি ঠেকাতে তাদের বাড়ির পেছনের দিকে পুকুরের পাশে বেশ উঁচু করে বাঁধ দেওয়া আছে। এমকি বাড়ির প্রবেশমুখেও আছে পানি আটকানোর ব্যবস্থা। কিন্তু এবার এগুলোর কোনোটিই কাজে আসেনি। বারান্দা অবধি পানি চলে আসছে।
গত তিন বছর ধরে এই সমস্যার মধ্যে আছেন বলে জানান স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা। তাঁদের ভাষ্য, বর্ষা মৌসুমে বানভাসিদের মতো বসবাস করতে হয়। এলাকার সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনপ্রতিনিধি ও পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চান সবাই।
ওই এলাকার জলাবদ্ধতার বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছেন। শিগগিরই এলাকাটির জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।জামালপুর পৌরসভার পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান
শহরের মধ্যে বসবাস করেও পানিবন্দী অবস্থা নিয়ে আফসোস করছিলেন একই এলাকার বাসিন্দা শিউলি বেগম। তিনি বলেন, ‘শহরের মইধ্যেও বানভাসির মতো থাকতে হইতাছে। এর চাইতে বড় কষ্টের আর কী হইতে পারে। দুই সপ্তাহ ধইরা ঘরের মধ্যে পানি। রান্না করার মতো অবস্থা নাই। খাটের মইধ্যে বইস্যা থাকতে হয়। নিচে নামলেই পানি। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নাই।’
আব্দুর রহিম নামের এক মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বন্যা হয়নি। তবুও বাড়ির আঙিনায় হাঁটুপানি। তিন বছর ধরে এলাকাটির পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা বিকল। তবু সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে জামালপুর পৌরসভার পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান, ওই এলাকার জলাবদ্ধতার বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছেন। শিগগিরই এলাকাটির জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।