গভীর রাতে কেঁপে উঠল বাড়িঘর, সীমান্তে থেমে থেমে বিস্ফোরণ

নাফনদীর পূর্ব পাশে মিয়ানমার সীমান্ত

গভীর রাতে কেঁপে ওঠে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত। গতকাল রোববার রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে থেমে থেমে ৪০-৪৫টি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে এ বিস্ফোরণ। আবার রাত তিনটা থেকে কিছুক্ষণ পরপর একই রকম বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান বাসিন্দারা, যা আজ সোমবার বিকেল চারটা পর্যন্তও অব্যাহত আছে।

টেকনাফে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিস্ফোরণের কথা জানান। এভাবে বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সীমান্তে বাসিন্দাদের মধ্যে।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রায় সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমার থেকে বিকট শব্দ ভেসে আসছে। তবে গতকাল রাতের শব্দগুলো ছিল ভয়ংকর। সীমান্তের বসতবাড়ি ও দালান কেঁপে উঠছে।

বিভিন্ন এলাকা থেকে জনপ্রতিনিধিরা কী ঘটনা জানতে চেয়ে ফোন করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, হঠাৎ করে রাতে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের বিভিন্ন এলাকা থেকে থেমে থেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক দিন ধরে টানা বিস্ফোরণের পাশাপাশি ভারী গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটছে মংডু টাউনের বিভিন্ন এলাকায়। হয়তো বিদ্রোহীরা আরও কিছু চৌকি দখল করায় সেগুলো পুনরুদ্ধার করার জন্য সে দেশের সরকারি বাহিনী রাতে যুদ্ধবিমান দিয়ে ভারী গোলাবারুদ নিক্ষেপ করছে। ওই সব বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপছে টেকনাফ।

টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের সীমান্তের ওপারে যুদ্ধবিমান উড়তে দেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সহিংসতার কারণে নতুন করে সীমান্তে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্ফোরণের কথা জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনেকে। মোহাম্মদ ইব্রাহিম নামের একজন লিখেছেন, ‘থেমে থেমে মিয়ানমারে বিস্ফোরণ। থরথর করে কাঁপছে পুরো সাবরাংয়ের বাড়িঘর। ভয়ে ঘুমাতেও পারছি না।’

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, রাতে হঠাৎ করে এমন ভয়ংকর বিস্ফোরণের শব্দে সাবরাংসহ টেকনাফ কেঁপে উঠেছে। এরপর আজ সকাল থেকে একের পর এক মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে টানা চার মাসের বেশি সময় ধরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। ইতিমধ্যে বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২০টির বেশি সীমান্তচৌকি এবং একাধিক সেনা ব্যারাক দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এখন মংডু টাউন দখল করা জন্য দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ চলছে।