সিলেটেও একটি মাজার ভেঙে দেওয়া হলো

সিলেট সদরের বটেশ্বর এলাকার চুয়াবহরে ভেঙে ফেলা হয় শাহ সুফি আব্দুল কাইউমের মাজার। আজ শনিবার দুপুরে তোলাছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেট শহরতলির খাদিমপাড়া এলাকায় শাহ সুফি আব্দুল কাইউম চিশতিয়ার মাজার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়নের বটেশ্বর চুয়ারবহর এলাকায় গতকাল শুক্রবার ফজরের নামাজের পর বহিরাগত কয়েকজন হাতুড়িসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে মাজারটি ভাঙেন।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ফজরের নামাজের পর ‘তৌহিদি জনতা’ পরিচয়ে মাজার, মাজারের দেয়াল ও কবর হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় মাজারের প্রবেশমুখে মৌলানা শাহ সুফি আব্দুল কাইউম চিশতিয়া জালালাবাদী (রহ.) মাজার শরিফ লেখা সাইনবোর্ডও ভেঙে ফেলা হয়। কবরের ওপরে টাঙানো লাল কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়। কয়েকজন এ ঘটনা দেখলেও ভয়ে সামনে যাননি।

এদিকে মাজার ভাঙার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়েছে। এতে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

আজ শনিবার বেলা দেড়টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, দেয়ালঘেরা একটি জায়গায় গাছগাছালি। সেখানে একটি বটগাছ ঘিরে দেয়াল দিয়ে কিছুটা উঁচু করে তৈরি করা কবরস্থান। এর পাশেই একটি দুই চালা টিনের ঘর। তবে ঘরটি তালাবদ্ধ।

কবরস্থানের পাশে কথা হয় শাহ সুফি আব্দুল কাইউম চিশতিয়ার নাতি মো. আবদুল বাকী চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই স্থানটি তাঁদের পারিবারিক কবরস্থান। তাঁর দাদা শাহ সুফি আব্দুল কাইউম একজন আলেম ছিলেন। তাঁর অনেক ভক্ত  ছিলেন। তাঁকে দাফনের পর সেখানেই ভক্তরা মাজার হিসেবে এটি গড়ে তুলেছেন।

তালা দেওয়া ঘরটি দেখিয়ে আবদুল বাকী চৌধুরী বলেন, সেখানে তাঁর ভক্তরা থাকেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁর ভক্তরা আসেন। তাঁর দাদার ভক্তরা কবরস্থানটিকে মাজার হিসেবে তৈরি করলেও তাঁরা সেটিকে পারিবারিক কবরস্থান বলেই দেখেন। কবরস্থানে তাঁর দাদি, বাবা, চাচা, চাচিসহ ভাতিজা এবং ভাতিজিদের দাফন করা হয়েছে।

আবদুল বাকী চৌধুরী আরও বলেন, ভাঙচুরকারীরা মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারে করেে এসেছিলেন। স্থানীয় এক–দুজন তাঁদের দেখেছেন। মাজারের কোনো খাদেম নেই। তাঁর ভক্তরাই খাদেমের দায়িত্ব পালন করেন। পরিবারের কেউ এতে জড়িত নন।


সিলেটের শাহপরান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল আজিজ বলেন, সকালে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে তাঁরা মাজারটি খুঁজে বের করেন। এ ঘটনায় কেউই কিছু থানায় জানাননি এবং অভিযোগও দেননি। যেটি ভাঙা হয়েছে, সেটি পারিবারিক কবরস্থান বলে দাবি করা হচ্ছে। কিছু ভক্ত সেখানে মাজার হিসেবে গড়ে তোলে গানবাজনা করতেন বলে জানা গেছে।

এর আগে সম্প্রতি স্থানীয় লোকজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের শাহপরানের মাজারে গানবাজনা নিষিদ্ধ করা হয়।

মাজারে তিন দিনব্যাপী ওরসের শেষ দিন গত সোমবার দিবাগত রাত তিনটা থেকে ফজরের সময় পর্যন্ত সংঘর্ষের ঘটনা স্থানীয় জনতা ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওরসপন্থী ব্যক্তি ফকির-পাগলদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছিলেন। পরে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।