‘সবই ঠিক আছে, কিন্তু সবকিছুর দাম বেশি, এখন জীবন অনেক কঠিন’
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় নিয়মিত ফুল বিক্রি করে ১২–১৫ জন শিশু। সবার বয়স ৮ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। দিনের পুরোটা সময় স্মৃতিসৌধের ভেতর ও বাইরে দর্শনার্থীদের কাছে ফুল বিক্রির বায়না ধরে কাটে তাদের। কেউ ফুল কেনেন, কেউ কেনেন না। সাধারণ দিনগুলোয় দর্শনার্থী থাকে কম। ফলে আয়ও হয় সামান্যই।
বিশেষ দিবসগুলোর আগে কয়েক দিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় স্মৃতিসৌধের বাইরেই ফুল বিক্রি করতে হয় এসব শিশুকে। তবে যেকোনো জাতীয় দিবসে স্মৃতিসৌধে থাকে দর্শনার্থীদের ভিড়। এ কারণে ফুল বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফোটে। ফলে এসব শিশুর কাছে যেকোনো দিবস মানেই প্রতিদিনের চেয়ে একটু বেশি আয়। দিনটিতে সকাল, দুপুর ও রাতের খাবারের পূর্ণ নিশ্চয়তা।
এসব শিশুর মতোই স্বাধীনতা দিবস নিয়ে একই ভাবনা দিনমজুর জাকির হোসেনের। গতকাল শনিবার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’
স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন গতকাল দুপুরে স্মৃতিসৌধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সবুজ মিয়া, মো. হাসান, মো. হোসাইন, মো. লাবিবসহ ১০-১৫ জন শিশু স্মৃতিসৌধের সামনে অপেক্ষারত দর্শনার্থীদের কাছে গোলাপ ফুল বিক্রির চেষ্টা করছে। এ সময় দু–তিনজন ফুল কেনেন, বাকিরা ‘না’ বলে দেন।
মো. সবুজের মা মুন্নি আক্তার বাঁশের ঝুড়িতে করে গোলাপ ফুল বিক্রি করেন। সবুজ সেখান থেকে কয়েকটি গোলাপ নিয়ে দর্শনার্থীদের কাছে গিয়ে বিক্রির বায়না ধরেন। স্বাধীনতা দিবসে তার অপেক্ষা প্রতিদিনের চেয়ে একটু বেশি ফুল বিক্রির।
সবুজ বলে, ‘এখন স্মৃতিসৌধের ভেতরে ঢুকতে দেয় না৷ কাল (আজ) ঢুকতে দিব। তখন অনেক ফুল বিক্রি হইব।’
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্মৃতিসৌধের সামনে দুই ভাই মো. হাসান ও মো. হোসাইনকে দেখা যায় ফুল বিক্রি করতে। কথা বলে জানা যায়, তখন পর্যন্ত সকাল ও দুপরের খাওয়া হয়নি তাদের।
হাসান জানায়, তাদের বাবা নেই। মায়ের সঙ্গেই থাকে আশুলিয়ার কুরগাঁও এলাকায়। মা অসুস্থ হয়ে বাসায় আছেন। প্রতিদিনের মতো তাই সকাল থেকে ফুল বিক্রির জন্য স্মৃতিসৌধে এসেছে।
হোসাইন বলে, ‘বাসায় চাইল (চাউল) নাই, তাই খাই নাই। দুই ভাই ফুল বেচি। এরপর চাইল কিনুম। কাইল অনেক ফুল বেচুম। সব দিন ওমন বেচা গেলে ভালো হইত।’
সপ্তাহখানেক আগে দেশে ফিরেছেন মো. সোহেল নামের এক দর্শনার্থী। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে স্মৃতিসৌধে ঘুরতে আসেন। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেখে খুশি সাভারের বিশমাইল এলাকার এই বাসিন্দা। তবে খাদ্য অনিশ্চয়তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি।
মো. সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলাম। এ বছর দেশে এসে দেখলাম, রাস্তাঘাটের বেশ উন্নতি হয়েছে। স্মৃতিসৌধটাও সুন্দর করা হয়েছে। সবই ঠিক আছে। কিন্তু বাজারে (খাদ্যপণ্যের) সবকিছুর দাম অনেক বেশি। এখন জীবন অনেক কঠিন।’
সংশোধনী
প্রথমে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের শিরোনাম এবং ব্যবহার করা ছবির মধ্যে অসঙ্গতি থাকায় ছবিটি তুলে নেওয়া হয়েছে এবং শিরোনাম সংশোধন করা হয়েছে। শিরোনামে উদ্ধৃত বক্তব্য ছবিতে থাকা সবুজ মিয়ার ছিল না, ছিল দিনমজুর জাকির হোসেনের।
একই কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।