বাল্যবিবাহ বন্ধের পর লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া ১০ শিক্ষার্থীকে সাইকেল উপহার
শিক্ষার্থীদের একজন মুঠোফোনে তার বাল্যবিবাহের কথা জানিয়ে সহযোগিতা চেয়েছিল। আবার কারও বন্ধু বাল্যবিবাহ হচ্ছে জানতে পেরে জানিয়েছে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। কেউ ফোন দিয়েছে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষকদের। তারপর স্থানীয় প্রশাসক ও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে তাদের বাল্যবিবাহ বন্ধ হয়েছে। বাল্যবিবাহ বন্ধ হওয়ার পর তারা আবার ফিরে গেছে বিদ্যালয়ে। এমন ১০ জন শিক্ষার্থীকে তালা উপজেলা প্রশাসন ও মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে সাইকেল উপহার দিয়েছেন।
‘নারীর জন্য বিনিয়োগ সহিংসতা প্রতিরোধ’ প্রতিপাদ্যে শনিবার সাতক্ষীরার তালায় আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস-২০২৩ উদ্যাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে এমন ১০ ছাত্রীকে এ সাইকেল উপহার দেওয়া হয়েছে। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফিয়া শারমিন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুন নাহারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার।
এর আগে দিবস উপলক্ষে তালা উপজেলা প্রশাসন ও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের আয়োজনে সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে এক শোভাযাত্রা বের হয়। পরে শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে তা শেষ হয়।
সাইকেল পাওয়া একজন ছাত্রী তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের বাসিন্দা। গত বছর পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই ছাত্রীর বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গিয়েছিল। ওই ছাত্রী মা–বাবাকে বোঝাতে না পেরে অবশেষে তালা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুন নাহারকে বিষয়টি জানায়। মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ওই এলাকার কিশোর-কিশোরী ক্লাবের মাধ্যমে ঘটনা যাচাই করে সত্যতা পান। পরে তার বিয়ের দিন পুলিশসহ সেখানে হাজির হন। একপর্যায়ে মেয়েকে লেখাপড়া করাবেন মর্মে মুচলেকা দেন ওই ছাত্রীর বাবা। তারপর থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে ওই ছাত্রী।
তালা উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুন নাহার বলেন, তাঁরা বছরে শতাধিক বাল্যবিবাহ বন্ধ করে থাকেন। কিন্তু এর মধ্যে বড় অংশের আবার বিয়ে হয়ে যায়। ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সেসব বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছেন, তার মধ্যে এই ১০ ছাত্রী লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকার মানুষদের ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়—বিষয়টি সচেতন করার জন্য এই ১০ শিক্ষার্থীদের হাতে সাইকেল তুলে দেওয়া হয়েছে।
ইউএনও আফিয়া শারমিন বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধ করার পরও অধিকাংশ ছাত্রীকে নানা কৌশলে তাদের অভিভাবকেরা বিয়ে দিয়ে দেন। ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে নয় এবং মেয়েদের স্বাবলম্বী হতে হলে শিক্ষার বিকল্প নেই—এমন বার্তা ছড়িয়ে দিতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী রাফিজা খাতুন, বিপাশা বিশ্বাস, সালেহা বেগম, কহিনুর বেগম ও ফিরোজা খাতুনকে জয়িতা পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজ উদ্দিন মোল্লা ও শিউলি সুলতানাকে আদর্শ দম্পতি হিসেবে সম্মাননা দেওয়া হয়।