বাগেরহাট পৌরসভা
শহরে অতি জোয়ারের পানি
প্রতি মাসের পূর্ণিমা ও অমাবস্যার জোয়ারে ছয় থেকে আট দিন এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয় শহরবাসীকে।
বৃষ্টির দরকার হয় না, জোয়ারের পানিতেই ডুবে যায় শহরের রাস্তাঘাট। প্রতি মাসে অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় বাগেরহাট পৌর শহরে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বর্ষা মৌসুম ছাড়াও নদীর উঁচু জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় শহরের রাস্তাঘাটসহ নিম্নাঞ্চল।
বছর বছর বাড়ছে পানি, প্লাবিত হচ্ছে আগের বছরের চেয়ে আরও বেশি এলাকা। প্রতি মাসের পূর্ণিমা ও অমাবস্যার জোয়ারে ছয় থেকে আট দিন এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয় শহরবাসীকে। এ সময় দিনে দুবার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট। পয়োনিষ্কাশন ও নালার ময়লা পানিতে একাকার হয় চারপাশ। গেল দেড় দশকের বেশি সময় ধরে চলছে এ অবস্থা।
শহরের বাসাবাটি এলাকার ইস্কেন্দার আলী বলেন, আগে কেবল বর্ষা মৌসুমে দেখা যেত দুই থেকে চারবার জোয়ারের সময় পানি ঢুকত। কিন্তু এখন প্রায় প্রতি মাসের অমাবস্যা–পূর্ণিমার জোয়ারেই পানি ঢুকছে। নালা থেকে ময়লা পানি এসে রাস্তাঘাট একাকার হয়।
শীত মৌসুম ছাড়া প্রায় সব অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে শহরে পানি ঢুকছে বলে জানান মুনিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ইসতিয়াক আহম্মেদ। তিনি বলেন, নদীর পাড় ধরে শহর রক্ষা বাঁধ আছে। কিন্তু খাল ও ড্রেন দিয়ে জোয়ারের পানি এলাকায় চলে আসে। ভরা বর্ষা মৌসুমে সমস্যা প্রকট হয়। রাস্তার ওপর দিয়ে স্রোত বয়ে যায়। বছর বছর পানি বাড়ছে। রাস্তাঘাট তো ডুবছেই, বছরে দু-চারবার ঘরবাড়িতে পানি ওঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উঁচু জোয়ারে দিনে দুবার এমন প্লাবিত হয় শহরের নাগেরবাজার, বাসাবাটি, মুনিগঞ্জ, মালোপাড়া, হাড়িখালীসহ বিভিন্ন এলাকা। একই চিত্র জেলার আরেক পৌরসভা মোরেলগঞ্জে। পৌর শহর ছাড়াও নদীর তীরবর্তী জেলার বিভিন্ন এলাকাতেও এই চিত্র এখন নিয়মিত।
শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালগুলো দখল, অপরিকল্পিত ড্রেনেজব্যবস্থা, ভৈরব ও দড়াটানা নদী দখল, প্লাবন ভূমি নষ্ট করা, নদ-নদীর তলদেশ ভরাটসহ নানা কারণে দিন দিন জোয়ারের পানি ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অন্যদিকে সামান্য বৃষ্টিতেই বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পৌরসভার অভ্যন্তরে থাকা বিভিন্ন খাল দখল, লেক ও পুকুর ভরাট, আবর্জনা ফেলে পানি নামার পথ বন্ধ করাসহ নানা কারণে শহরের জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। বড় খাল বন্ধ করে সেখানে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ছোট বক্স ড্রেন হয়েছে। ফলে পানি ঠিকমতো নামতে পারছে না। দুর্ভোগ বাড়ছে।
পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মামুন মোল্লা বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ডের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া পূর্ব বাসাবাটি খালটি স্থানীয় এক কাউন্সিলর বালু ফেলে ভরাট করেছেন। পিসি কলেজে রোডের খালটির পাশেও বালু ফেলে উঁচু করা হয়েছে।’
এই এলাকার রুহুল আমিন বলেন, বর্ষা মৌসুমে জোয়ার বা ভারী বৃষ্টিতে রাস্তায় হাঁটুসমান পানি জমে যায়। কোনো কোনো রাস্তা উঁচু করা হয়েছে। কিন্তু পানি বাড়ায় সেখানেও পানি উঠছে। অনেকের বাড়িঘরে পানি ঢোকে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় নালা নির্মাণ করা হলেও কাজে আসছে না।
নদীর তীরবর্তী শহর রক্ষা বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান বলেন, দুটি স্লুইসগেট ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। হঠাৎ নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় ভাঙা গেট দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। গত বৃহস্পতিবারই তা মেরামত করা হয়েছে। আপাতত পানি প্রবেশ করতে পারবে না। এ ছাড়া পৌর এলাকার ড্রেনেজ ও পানিনিষ্কাশনের জন্য নভেম্বরে কাজ শুরু হবে। কাজ শেষ হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ বলেন, বাগেরহাট উপকূলীয় শহর। এখানে পূর্ণিমা-অমাবস্যার জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার এ চিত্র পুরোনো। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ার যে কথা শোনা যায়, তারও কিছু প্রভাব হয়তো আছে। আগের চেয়ে পানির চাপ বাড়ছে। স্থানীয় প্রায় সব নদী-খালের তলদেশই ভরাট হয়েছে।