ভোটকেন্দ্রের বাইরে পুলিশ সদস্যকে মারধরের ছবি তোলায় সাংবাদিকের ওপর হামলা
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলাকালে ভোটকেন্দ্রের বাইরে এক পুলিশ সদস্যকে মারধর করার সময় ছবি ও ভিডিও করায় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়েছেন। তাঁরা ওই সাংবাদিকের মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করেছেন। আজ বুধবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে উপজেলার হোসেন্দি ইউনিয়নের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার ওই সাংবাদিকের নাম গোলজার হোসেন। তিনি দৈনিক মানবজমিনের মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি ও মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহসভাপতি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুজন হলেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল হকের সমর্থক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক (মিঠু) ও তাঁর ভাতিজা তানভীর হক (তুরীন)।
প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকেরা জানান, আনারস প্রতীকের সমর্থক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক তাঁর ভাতিজা তানভীর হক ও তাঁদের লোকজন ভোটকেন্দ্রের বাইরে জড়ো হচ্ছিলেন। পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য সোহেল রানা সবাইকে সরে যেতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সোহেলকে মারধর শুরু করেন মনিরুল হক ও তাঁর লোকজন। এ সময় পাশ থেকে ছবি তুলছিলেন ও ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক গোলজার হোসেন। পরে তাঁরা সোহেলকে রেখে গোলজারের ওপর হামলা করেন। এ সময় অন্য সাংবাদিকেরা এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। পরে সাংবাদিকেরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে আশ্রয় নেন। সেখানে তাঁদের অবরুদ্ধ অবস্থায় মারধরের জন্য তেড়ে আসেন মনিরুল হক ও তাঁর লোকজন।
মারধরের ঘটনার পর কেন্দ্রের ভেতরে মনিরুল হক ও তাঁর লোকজন প্রবেশ করার সময় সাংবাদিকদের হাত কেটে ফেলার হুমকি দেন। সেখানে মনিরুল হক হুংকার দিয়ে বলেন, ‘দুই-চারজন সাংবাদিক মেরে ফেললে কী হবে?’ এই দৃশ্য ভিডিও করতে গেলে মাই টিভির সাংবাদিক ও প্রথম আলোর এই প্রতিনিধির মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন মনিরুল হক।
সাংবাদিক গোলজার হোসেন বলেন, ভোটকেন্দ্রের পাশে এক পুলিশ সদস্যকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে মারধর করছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হক ও তাঁর লোকজন। তিনি ছবি ও ভিডিও করতে শুরু করেন। এতে তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে মারধর করেন। মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে সব ছবি ও ভিডিও মুছে ফেলেন। পরে তাঁরা মুঠোফোনটি ভেঙে ফেলেন।
ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্য সোহেল রানা বলেন, ‘কেন্দ্রের পাশে একটি দোকান ছিল। সেখানে আনারস প্রতীকের সমর্থকেরা জড়ো হচ্ছিলেন। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমি তাঁদের সরে যেতে বলি। এতে আনারসের সমর্থকেরা আমার ওপর হামলা চালান। এ সময় সাংবাদিক ছবি তোলায় তাঁকেও মারধর করেন তাঁরা।’
এ ঘটনায় আরেক ভুক্তভোগী সাংবাদিক শেখ মোহাম্মাদ রতন বলেন, ‘সাংবাদিক গোলজারকে মারধরের পর ৩০ মিনিটের মতো কেন্দ্রের ভেতর আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। আমরা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। তাঁরা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিষয়টি পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে আমরা হতভম্ব হয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপপরিদর্শক রতন বৈরাগীকে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ঘটনার পর কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না—এমন প্রশ্নের জবাবে রতন বৈরাগী বলেন, ‘এখানে কিছুই হয়নি। সব ঠিক আছে। এ ব্যাপারে আর কিছু বলতে পারব না।’