ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি গঠন নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৬
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এই সংঘর্ষে ছয়জন আহত হয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জেলা শহরের গভ. মডেল গার্লস হাইস্কুলে এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিটি মডেল কলেজের শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দিন (২১), মানারাত ইউনিভার্সিটির এলএলবির শিক্ষার্থী ইখতিয়ার উদ্দিন (২২), স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তোয়াসিন আল মারজান (২৩) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফয়সাল আহমেদ (২৭), মো. দুর্জয় (২৪) ও রায়হান (২৫)।
স্থানীয় লোকজন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ওই ফেসবুক গ্রুপের সদস্য। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে সেই গ্রুপের মাধ্যমে শনিবার বিকেলে জেলার গভ. মডেল গার্লস হাইস্কুলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি গঠনে একটি সভা আহ্বান করা হয়। এর আগে কমিটি গঠন নিয়ে ফেসবুকে চারটি পোস্ট দেন শিক্ষার্থীরা।
ফেকবুকে গ্রুপে করা আহ্বানে শনিবার বিকেলে জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা প্রথমে জেলার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে জড়ো হন। সেখান থেকে পরে তাঁরা গভ. মডেল গার্লস হাইস্কুল মিলনায়তনের ভেতরে গিয়ে সভা করেন। সভায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহর ও উপজেলার পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হন। ওই সভায় বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও ছাত্রলীগের কিছু নেতা–কর্মীও যোগ দেন। সভার এক পর্যায়ে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুটি পক্ষের সৃষ্টি হয়।
পরে সভা সঞ্চালনায় থাকা একজন সভা থেকে ছাত্রলীগ, জাতীয় পাটি ও বিএনপির নেতা–কর্মীদের চলে যেতে বলেন। এই বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষ তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। গভ. মডেল গার্লস হাইস্কুলে এক পক্ষের শিক্ষার্থীরা সভায় উপস্থিত বোরহান উদ্দিন ও ফয়সাল আহমেদকে মারধর করেন। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের আরেকটি পক্ষ শহরের টেংকেরপাড় লোকনাথদীঘি ময়নাদানে যান। শিক্ষার্থীদের আরেকটি পক্ষ সেখানে ইখতিয়ার উদ্দিন ও তোয়াসিন আল মারজানকে মারধর করেন। আহতদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল ও স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি গ্রুপ রয়েছে। অনেকেই ওই গ্রুপে যুক্ত রয়েছে। আরেকটি পক্ষ ফেসবুকে নানা বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানা সমালোচনা করে। মূলত কমিটি গঠন নিয়ে সংঘর্ষে রায়হান ও দুর্জয় নামের দুই শিক্ষার্থীসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। সভায় কমিটি গঠন নিয়ে মুখ্য সংগঠক পদে ১৪-১৫, মুখপাত্র ও সদস্যসচিব পদে বেশ কয়েকজন ও আহ্বায়ক পদের ১৮-২০ প্রার্থী হন। সভায় ছাত্রলীগ, জাতীয় পাটি ও বিএনপির অনেক নেতা–কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সভা থেকে চলে যেতে বললেই এক পক্ষ আরেক পক্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ শুরু হয়।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) বিবিএর শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি গঠন নিয়ে ফেসবুকে চারটি পোস্ট দেওয়া হয়। কমিটি গঠন নিয়ে কেন মারামারি হবে। এ জন্যই কী আমরা আন্দোলন করেছি। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এ ঘটনার বিচার হওয়া উচিত।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে গভ. মডেল গার্লস হাইস্কুলে দুজন আহত হয়েছেন। এক পক্ষে ফয়সাল বোরহান ও অপর পক্ষে তৌসিফ নামে একজন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
ময়মনসিংহে সভা শেষে মারামারি, আহত ২
ময়মনসিংহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি গঠন নিয়ে সভা চলাকালে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুজন আহত হয়েছেন। তাঁদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় শনিবার রাতেই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাংগঠনিক কার্যক্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ সম্মেলনকক্ষে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। জেলা ও মহানগর কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিদের সঙ্গে ময়মনসিংহ মহানগর ও ময়মনসিংহ জেলার ছাত্র প্রতিনিধিদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ২টায় শুরু হওয়া এ সভায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ময়মনসিংহ বিভাগীয় টিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ফুয়াদ হাসান ও সাকিবুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। কীভাবে কমিটি গঠন করা যায়, সে বিষয়ে তাঁরা মতামত নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সভা চলাকালে মো. রিয়াদ সারোয়ার নামে একজনের সঙ্গে মো. সিফাত নামে অপর একজনের বাগ্বিতণ্ডা হয়। রিয়াদ সারোয়ার সভায় অংশ নেওয়া এক মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সময় ডাক দেন সিফাত। ডাক শুনে সিফাতের কাছে যেতে বিলম্ব করায় তাঁদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি শুরু হয়। এ সময় সিফাত রিয়াদ সারোয়ারকে ঘুষি দেন । পরে অন্যরা দুজনকে থামিয়ে দিলেও সভা শেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সভাস্থল থেকে বের হওয়ার সময় দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। এ সময় রিয়াদ সারোয়ার ও তাঁর বন্ধু আব্দুল কাদির শৈশব নামে দুজন আহত হন। তাঁরা দুজনই আনন্দ মোহন কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে রিয়াদ সারোয়ারকে বেধড়ক পিটুনি দেওয়া হয় এবং আবদুল কাদির শৈশবকে মাথা ও গালে ছুরিকাঘাত করা হয়। তাঁদের দুজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনায় রাতেই রিয়াদ সারোয়ার ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। রিয়াদ সারোয়ার বলেন, সভা চলাকালে এক বড় আপুর সঙ্গে কথা বলছিলাম। সে সময় ডাকতে থাকে সিফাত। যেতে দেরি হওয়ায় আমাকে ঘুষি দেয়। পরে সভা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সংঘবদ্ধ হয়ে সিফাত ও তাঁর সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা করেন।
ওই সভায় থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহের সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, বাগ্বিতণ্ডার জেরে দুই পক্ষ মারামারিতে জড়ায়। সভা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় এমন অবস্থা দেখে তাঁদের নিবৃত্ত করা হয়।
বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের জানানো হয়েছে জানিয়ে ময়মনসিংহের অন্যতম সমন্বয়ক আশিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখন কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম খান বলেন, নিজেদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি নিয়ে মারামারির ঘটনায় থানায় এক পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।